বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা জানাতে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে তার হোটেল স্যুইটে একত্রিত হন বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা। তারা বাংলাদেশের এই গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরকালে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিকে-ফ্রেইবারগারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
বিশ্বনেতাদের প্রশংসা ও সহযোগিতার আশ্বাস
এই প্রতিনিধিদলে স্লোভেনিয়া, সার্বিয়া, লাটভিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্টসহ ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
নেতারা ড. ইউনূসের নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তার আজীবন অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ‘আমরা আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন জানাতে এসেছি। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’ তারা আরও উল্লেখ করেন যে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরের দুর্নীতি, শোষণ ও দুঃশাসনের কারণে দেশটি বর্তমানে ১০টি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
তারা অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি দেশের মানবাধিকার অগ্রগতির প্রশংসা করে এটিকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেন। জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান শিগগিরই বাংলাদেশের ‘জুলাই বিপ্লব’-এর প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে।
ড. ইউনূসের কৃতজ্ঞতা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
এভাবে অপ্রত্যাশিত সমর্থন পেয়ে ড. ইউনূস গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একেবারেই অবিশ্বাস্য। আপনাদের এভাবে আমাদের সমর্থনে দাঁড়ানো দেখে আমি মুগ্ধ।’ বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে তিনি একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে ফেরার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘দেশটি গত ১৬ বছর ধরে একটি রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের মধ্যে ছিল।’
ড. ইউনূস বলেন, সীমিত সম্পদের কারণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন করার আহ্বান জানান। তার ভাষায়, ‘আমাদের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা ও নৈতিক শক্তি আমাদের জন্য অমূল্য।’ সূত্র- বাসস