বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত ও একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করা তাদের কাজ হতে পারে না।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মাতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—প্রতিটি ধর্মের প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার একটি বড় সুযোগ এসেছে।
তবে তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন:
“ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের কিছু সঙ্গীর ভূমিকা দেশের বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগকে বিনষ্ট করার পরিস্থিতি তৈরি করছে। এতে দেশ অস্থিতিশীল হলে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে।”
সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হওয়া নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন তারেক রহমান:
- বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন: বিতাড়িত স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের সময়ে দেশের জনপ্রিয় দল হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ৭০০-র বেশি নেতাকর্মীকে গুম, অপহরণ ও খুন করা হয়েছিল এবং রাতের বেলায় আদালত বসিয়ে রায় ঘোষণা করা হতো। এর মূল কারণ ছিল দেশে আইনের শাসন ছিল না।
- সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা: তিনি বলেন, সেই সময়ে কোনো ধর্মের মানুষই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেনি। ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলাসহ দেশের কোথাও কোনো একটি হামলারও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা বিচার হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত দেড় দশকে তিনি ও তাঁর দলের নেতারা সুশীল সমাজ, সর্বদলীয় ও সর্বধর্মীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন, যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাসাবাড়ি কিংবা উপাসনালয়ে সংঘটিত প্রতিটি হামলার নেপথ্য ঘটনা উদঘাটন করে সুষ্ঠু বিচার হয়। কিন্তু সেই দাবিগুলোর একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই বিএনপি মনে করে, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু—কোনো নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একমাত্র ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের শাসনামলে বিরোধীরা যেভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করেছিল, আজ পতিত পরাজিত সেই ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও একইভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্তের চেষ্টা করছে কিনা, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার।
- জাতীয় ঐক্য: তিনি মনে করেন, গুপ্ত বাহিনীর অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা। এ কারণেই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমঝোতার পথ ধরে রেখেছে।
-
আগামী দিনের পরিকল্পনা: তারেক রহমান জানান, বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ৫০ লাখ নারীপ্রধানের নামে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ এবং প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য ‘ফার্মার্স কার্ড’ ইস্যু করার পরিকল্পনা রয়েছে।







