আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। আরপিও-তে একাধিক যুগান্তকারী সংশোধনী আনা হয়েছে, যার লক্ষ্য নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
আরপিও-তে তিনটি প্রধান সংশোধনী
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি জানান, আরপিওতে আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলো হলো:
১. ইভিএম বাতিল: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা হয়েছে।
২. ‘না ভোট’ পুনর্বহাল: এটি পুনর্বহাল করায় কোনো নির্বাচনী আসনে কেবল একজন প্রার্থী থাকলে, ভোটাররা তাকে ভোট না দেওয়ার (না ভোট) সুযোগ পাবেন। তখন সেই আসনে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, এটি ২০১৪ সালের মতো সাজানো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে আনা হয়েছে।
৩. সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ: প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে অর্জিত আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, জনগণ যেন সহজেই তাদের প্রার্থীর আর্থিক অবস্থা জানতে পারে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীসমূহ
আরপিও সংশোধনীতে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান যুক্ত করা হয়েছে:
- সামরিক বাহিনী অন্তর্ভুক্ত: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- পলাতক আসামিদের নিষেধাজ্ঞা: পলাতক আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
- নির্বাচনী জামানত হ্রাস: নির্বাচনী জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
- অনুদানে স্বচ্ছতা: রাজনৈতিক দলকে ৫০০ টাকার বেশি অনুদান বা চাঁদা দিতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং অনুদানদাতার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে।
- ডাক ভোটের সম্প্রসারণ: বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভোটার ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ডাক ভোটে ভোট দিতে পারবেন।
- গণমাধ্যমের ভূমিকা: ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
- ইসিসির ক্ষমতা বৃদ্ধি: কোনো নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো এলাকার ভোট বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
- জোটের প্রতীক: জোটের প্রার্থীদের প্রতীক ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে বিধান যোগ করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা সহজে প্রার্থীর দল বুঝতে পারেন।
এছাড়াও, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন পেয়েছে।







