ফুটবল রাজনীতি বনাম শান্তির পুরস্কার: ট্রাম্পকে ফিফা’র প্রথম ‘শান্তি পুরস্কার’ প্রদান, বিশ্বজুড়ে সমালোচনা

ফুটবল পরিচালনাকারী সংস্থা ফিফা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নীতি বজায় রাখলেও, সংস্থাটির প্রধান জিয়ান্নি ইনফান্তিনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথম ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’ প্রদান করায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের আগে ট্রাম্পের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

ইনফান্তিনোর এই পদক্ষেপকে সমালোচকরা ফুটবলের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে আসা এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও সুসংহত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

২০২৬ বিশ্বকাপ ড্র অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ট্রাম্পের হাতে এই নতুন প্রবর্তিত পুরস্কারটি তুলে দেন। পুরস্কার প্রদানকালে ইনফান্তিনো ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর প্রশংসা করেন। বিশেষত, ইসরায়েল এবং কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনকারী তথাকথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ চুক্তির জন্য তিনি ট্রাম্পের উদ্যোগকে সমর্থন জানান।

ইনফান্তিনো বলেন, “আমরা একজন নেতার কাছ থেকে এটাই চাই: একজন নেতা যিনি জনগণের জন্য চিন্তা করেন। আমরা একটি নিরাপদ বিশ্বে, নিরাপদ পরিবেশে বাস করতে চাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই, এবং মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনার কাজের জন্য, আপনি যা অর্জন করেছেন তার জন্য আপনি অবশ্যই প্রথম ফিফা শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।”

 ট্রাম্প এই নতুন ফিফা স্বীকৃতিকে তাঁর প্রাপ্ত “মহান সম্মান”গুলোর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেন। তিনি আবারও দাবি করেন যে, তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে থাকার কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে এবং তিনি আটটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য চলাকালীনও ট্রাম্প তাঁর ডেমোক্র্যাট পূর্বসূরি জো বাইডেনের রেকর্ড নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, “এক বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না, তবে এখন আমি বলতে পারি যে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দেশ।” (অর্থনীতিতে ভালো করার ইঙ্গিত দিয়ে)

তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক

ফিফার এই পুরস্কার প্রদান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এই পুরস্কার এমন এক সময়ে এলো, যখন এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবিয়ান সাগরে জাহাজ লক্ষ্য করে আরও একটি মারাত্মক বিমান হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ-এর সাবেক কর্মকর্তা ক্রেইগ মোখাইবার, যিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কারণে ইসরায়েলকে বিশ্ব ফুটবল থেকে বহিষ্কার করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন, তিনি ট্রাম্পকে পুরস্কার দেওয়াকে “সত্যিই লজ্জাজনক ঘটনা” বলে অভিহিত করেছেন। মোখাইবার আল জাজিরাকে বলেন, ইনফান্তিনো এই পুরস্কারের মাধ্যমে ট্রাম্পের ইসরায়েলকে সমর্থন, ক্যারিবিয়ান সাগরে হামলা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে “মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন” এর মতো “লজ্জাজনক রেকর্ডকে” আড়াল করার চেষ্টা করছেন। ইনফান্তিনো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ফুটবল “ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে না”। ফুটবল সাংবাদিক জ্যাক লোয়ি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ডনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হলো লুইস সুয়ারেজকে (ফুটবলার) মানুষের কান কামড়ে না ধরার জন্য পুরস্কার দেওয়ার মতো।”

রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা থেকে সরে আসা

ইনফান্তিনো পূর্বে ফুটবলকে বিভেদ সৃষ্টিতে ব্যবহার না করার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন এবং ফুটবলের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। সমালোচকরা বলছেন, মাত্র দু’বছর পরে ইনফান্তিনো শান্তির পুরস্কার এমন একজন প্রেসিডেন্টকে দিলেন, যিনি কয়েক দিন আগেই সোমালিয়ার মানুষদের “আবর্জনা” বলে মন্তব্য করেছিলেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র সহ-আয়োজক হওয়ায় ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো হোয়াইট হাউসে নিয়মিত অতিথি হিসেবে যান এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও এই পুরস্কারের সমালোচনা করে বলেছে, “ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে পারেননি, তাই ফিফা তাঁর জন্য একটি পুরস্কার তৈরি করে নিয়েছে।”

সূত্র- আলজাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top