মিরপুর অগ্নিকাণ্ড: ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার, প্রাণহানির পেছনে বিষাক্ত ধোঁয়া ও ছাদের তালা!

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা এবং লাগোয়া রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এই বিপুল প্রাণহানির পেছনে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে শিয়ালবাড়ির ৩ নম্বর সড়কে পাঁচ তলা পোশাক কারখানা ভবন ও তার বিপরীত দিকে থাকা রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগে। রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী

মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ

ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, রাসায়নিক গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছিল এই প্রাণহানির প্রধান কারণ। এই গ্যাস অত্যন্ত প্রাণঘাতী হওয়ায় ভুক্তভোগীরা দ্রুত সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।

এছাড়া, যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। ফায়ার সার্ভিস মনে করছে, এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা জীবন বাঁচাতে ওপরে উঠে পালানোর কোনো সুযোগ পাননি। আগুন দ্রুত ‘ডেভেলপ স্টেজ’ বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

নিরাপত্তা সনদের ঘাটতি ও রহস্যজনক বিস্ফোরণ

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পোশাক কারখানা ভবন ও রাসায়নিক গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ বা প্ল্যান ছিল না। গুদামটিতে প্রায় ৬ থেকে ৭ ধরনের রাসায়নিক মজুত ছিল। ঘটনার পর থেকে রাসায়নিক গুদামের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আগুন লাগার সঠিক কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি। তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাসায়নিক গুদামের পাশে থাকা একটি ‘ওয়াশ ইউনিটে’ প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন দ্রুত গুদামে ছড়িয়ে পড়লে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং এরপর তা পাঁচতলা পোশাক কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে।

উদ্ধার ও শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া

উদ্ধার হওয়া ১৬টি মরদেহ পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, মরদেহগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। অন্যদিকে, পোশাক কারখানার ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও রাসায়নিক গুদামের আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারিতে রাতের মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top