জেনেভা থেকে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অন্যতম তরুণ নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও মর্মবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন। ফলকার তুর্ক তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন যে, গত বছর বাংলাদেশে সংঘটিত ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নেতাকে এভাবে প্রাণ হারানো দেখতে হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি হাদির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
জাতিসংঘের এই শীর্ষ কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনে বাংলাদেশ সরকারকে একটি দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার আওতায় আনা দেশের বর্তমান স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি তিনি দেশের সাধারণ মানুষকে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে শান্ত থাকার এবং যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। তাঁর মতে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা প্রতিশোধ গ্রহণ কেবল সমাজে বিভাজনকে আরও গভীর করবে এবং সবার মৌলিক অধিকার রক্ষার পথকে সংকুচিত করবে।
আসন্ন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট টেনে ফলকার তুর্ক বলেন, নির্বাচনের আগে জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার তাগিদ দেন তিনি। তিনি মনে করেন, নির্বাচনি লড়াই শুরুর প্রাক্কালে এ ধরনের ঘটনা জনমনে ভীতি তৈরি করতে পারে, যা নিরসন করা একান্ত প্রয়োজন।
ঘটনার প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি প্রচারণার সময় শরিফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে অতর্কিত গুলি চালানো হয়। সেই মারাত্মক গুলি তাঁর মাথা ভেদ করে যাওয়ায় তিনি অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার দুপুরে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল এই অকুতোভয় যোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।







