ঐতিহাসিক ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালিত হয়েছে। এই দিনটিকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবির্ভাবের ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে উদযাপন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বিএনপি দিবসটি উপলক্ষে আলোচনাসভা, র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে:
- পতাকা উত্তোলন ও শ্রদ্ধা: সকালে সারা দেশে বিএনপির সকল কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ১০টায় দলের শীর্ষ নেতারা শহীদ রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।
- বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা: বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। সারা দেশের জেলা ও উপজেলা শাখাগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে।
- অন্যান্য আয়োজন: বিএনপির সহযোগী সংগঠন ও স্থানীয় শাখাগুলো আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফটো প্রদর্শনী, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং অনাথ শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণের মতো নানা আয়োজন করে।
- কেন্দ্রীয় সভা: দলটি আগামী ১২ নভেম্বর রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে একটি কেন্দ্রীয় আলোচনা সভার আয়োজন করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব তুলে ধরেন:
- সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনীতি: তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় মোড় ঘুরানো ঘটনা নয়, এটি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সূচনা।
- জাতীয় ঐক্য: তাঁর মতে, একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ার জন্য ৭ নভেম্বরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন:
- দেশের টার্নিং পয়েন্ট: সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসা দেশের জন্য ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এই ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জনগণ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেছিল।
- ষড়যন্ত্র মোকাবিলা: তিনি সতর্ক করে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য এখন নানা অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র চলছে। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৭৫ সালের এই দিনে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ জনগণের যৌথ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার অবস্থা থেকে বেরিয়ে নতুন এক যাত্রা শুরু করেছিল।
- জিয়ার আবির্ভাব: ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকাসহ সারা দেশের রাজপথে হাজারো মানুষ এই অভ্যুত্থান উদযাপন করতে নেমে আসে। সেই মুহূর্তেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন।
- ঐক্যের ডাক: সেই দিনই জিয়াউর রহমান রেডিওতে ‘আমি জিয়া বলছি’—এই পরিচিত আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেন, যা জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার প্রেরণা জাগিয়েছিল। সৈনিক ও সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে “সিপাহি-জনতা ভাই ভাই, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান চিরজীবী হোন” স্লোগান তুলেছিল।
- মুক্তি: ওই দিন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশকে ভূরাজনৈতিক, সম্প্রসারণবাদী ও নব্য ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের জাল থেকে মুক্ত করেন এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বতন্ত্র বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার বিকাশ শুরু হয়।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।







