মধ্য এশিয়ার ৫ দেশের নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক: চীন-রাশিয়ার প্রভাব মোকাবেলায় কৌশলগত উদ্যোগ

রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা এবং কৌশলগত সম্পদ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প

এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে রাশিয়া ও চীনের দীর্ঘদিনের আধিপত্য মোকাবিলা করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।

বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য ও কৌশল

  • কৌশলগত খনিজ নিয়ন্ত্রণ: যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, জ্বালানি সরবরাহ এবং বাণিজ্য পথ নিশ্চিত করতে মধ্য এশিয়ায় নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ করে বিরল খনিজের ওপর নজর দিয়েছে, যা ব্যাটারি, সামরিক সরঞ্জাম এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো উন্নত প্রযুক্তি উৎপাদনে অপরিহার্য।
  • নির্ভরশীলতা হ্রাস: ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো চীন ও রাশিয়ার ওপর এই অঞ্চলের দেশগুলোর (কাজাখস্তান, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান) নির্ভরশীলতা কমানো এবং তাদেরকে একটি বিকল্প পথ দেখানো।
  • বাণিজ্যিক চুক্তি: ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এর পরিচালক গ্রাসেলিন বাসকারান জানান, ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিটি দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পাওয়া নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক চুক্তিও করবে।

সি৫+১ প্ল্যাটফর্ম ও নিরাপত্তা সহযোগিতা

এই বৈঠকটি সি৫+১ কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্মের অধীনে হচ্ছে, যা ২০১৫ সালে চালু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার ৫ দেশের মধ্যে অর্থনীতি, জ্বালানি ও নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বাড়িয়ে চলেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্য এশিয়ার অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণ এবং সম্পর্ক জোরদারের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।

  • নিরাপত্তা জোরদার: ট্রাম্পের বৈঠকের আরেকটি লক্ষ্য হলো নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করা। বিশেষ করে আফগানিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং চীন ও রাশিয়ার সীমান্তের কাছে সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা তার লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত।
  • বাগরাম ঘাঁটির গুরুত্ব: আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে চেষ্টা ট্রাম্প করছেন, সে কারণে আফগান সীমান্তবর্তী তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভূ-রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা

মধ্য এশিয়া অঞ্চলের এই পাঁচটি দেশ (কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান) তাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান (চীন, রাশিয়া এবং আফগানিস্তানের পাশে অবস্থিত) এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার একটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের এই বৈঠকের অন্যান্য লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও বাড়িয়ে তোলা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top