মাইলস্টোন স্কুল বিমান বিধ্বস্তের তদন্ত প্রতিবেদন জমা: মূল কারণ ‘পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি’

গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি

বুধবার (৫ নভেম্বর) তদন্ত কমিটির প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এস এম কামরুল হাসানসহ একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য জানান।

১. দুর্ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি

  • মূল কারণ: প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। প্রশিক্ষণের জন্য পাইলট যখন ফ্লাই করছিলেন, তখন পরিস্থিতি তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
  • হতাহতঃ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ওই মর্মান্তিক ঘটনায় পাইলটসহ অন্তত ৩৫ জন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
  • তদন্ত: ঘটনা তদন্তে ২৭ জুলাই ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তিন মাস তদন্ত শেষে কমিটি এই প্রতিবেদন জমা দিল।

২. মাইলস্টোন স্কুলের ত্রুটি ও সুপারিশ

তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার পেছনে ভবনের নির্মাণজনিত ত্রুটির বিষয়টিও তুলে ধরেছে:

  • রাজউকের কোড লঙ্ঘন: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইলস্টোন স্কুল ভবনটি রাজউকের বিল্ডিং কোডের অনুমোদনে হয়নি। বিল্ডিংয়ে ন্যূনতম তিনটি সিঁড়ি থাকার কথা থাকলেও বিধ্বস্ত বিল্ডিংয়ে ছিল মাত্র একটি সিঁড়ি, যা ছিল মাঝ বরাবর।
  • কম্পিউটার মডেলিং: বিশেষজ্ঞ কমিটি বলছে, ভবনে তিনটি সিঁড়ি থাকলে হতাহতের সংখ্যা আরও কম হতো
  • সুপারিশ: তদন্ত কমিটি মোট ৩৩টি সুপারিশ করেছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।

৩. প্রধান সুপারিশ ও সরকারি নির্দেশনা

তদন্ত কমিটির প্রধান সুপারিশগুলো এবং এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনাগুলো হলো:

বিষয় সুপারিশ ও নির্দেশনা
বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ জননিরাপত্তার স্বার্থে এখন থেকে বিমানবাহিনীর সব প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ঢাকার বাইরে পরিচালিত হবে।
ভবন নির্মাণ কোড রাজউকের বিল্ডিং কোড যাতে নতুন সম্প্রসারিত এলাকায় যথাযথভাবে পালিত হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে
রানওয়ে সম্প্রসারণ বরিশাল ও বগুড়ায় রানওয়ে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এয়ারপোর্টের আশেপাশে যেন ‘ফোম টেন্ডার’ (দাহ্য তরল পদার্থের আগুন নেভানোর বিশেষ গাড়ি) থাকে, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
উচ্চতা বিধিনিষেধ টেক অফ ও ল্যান্ডিং পথের আশেপাশে হাসপাতাল, স্কুল, ওয়্যারহাউজ ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরগুলো যাতে ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, সে বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিমানের স্বল্পতা প্রতিবেদনে বিমানবাহিনীর বিমানের স্বল্পতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top