মালয়েশিয়ার কলিং ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দেশের আলোচনার টেবিলে দীর্ঘসূত্রিতা কাটছে না। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে আরোপ করা নতুন শর্ত নিয়ে শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞ এবং শ্রমিক অধিকারকর্মীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এই শর্তগুলো পুরনো ‘সিন্ডিকেট প্রথাকে’ নতুন রূপে ফিরিয়ে আনতে পারে।
পুরনো সিন্ডিকেট ও আর্থিক লুটপাটের ইতিহাস
পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে একজন শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় যেতে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে, যেখানে বৈধ খরচ ছিল অনেক কম। সম্প্রতি একটি দেশীয় সংস্থার তদন্তে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লুটপাটের তথ্য নামসহ প্রকাশ্যে এসেছে।
মালয়েশিয়ার নতুন শর্ত ও ‘র্যাশনালাইজেশন’
২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে যোগ্য রিক্রুটিং এজেন্সির (RAs) নাম জমা দিতে বলা হয়েছে। এই তালিকা মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ১০টি কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হবে।
- লক্ষ্য: নতুন প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে অনুমোদিত এজেন্সির সংখ্যা ‘যৌক্তিকীকরণ (Rationalization)’ করা হবে। উদ্দেশ্য হলো, নৈতিক ও গঠনমূলক শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করা।
- শ্রমিক অধিকারকর্মীদের সংশয়: শ্রমিক অধিকারকর্মীরা এই ‘র্যাশনালাইজেশন’ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কুয়ালালামপুরভিত্তিক শ্রমিক অধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডি হল বলেন:
“যদি মানদণ্ডগুলো বাস্তবিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে খুব অল্প কিছু এজেন্সি টিকে থাকবে। এটি র্যাশনালাইজেশন নয়, বরং সিন্ডিকেশন।”
আগের ব্যবস্থায় মাত্র ১০০টি এজেন্সিকে শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা একচেটিয়া ও শোষণমূলক হওয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।
নির্ধারিত ১০টি কঠোর মানদণ্ড
মালয়েশিয়া সরকার যে ১০টি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ করা অধিকাংশ ছোট এজেন্সির পক্ষে অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা:
১. ন্যূনতম পাঁচ বছরের লাইসেন্সধারী হতে হবে।
২. গত তিন বছরে অন্তত ৩ হাজার শ্রমিক পাঠানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৩. অন্তত তিনটি দেশে শ্রমিক পাঠানোর রেকর্ড থাকতে হবে।
৪. ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস, যা অন্তত তিন বছর ধরে কার্যক্রমে রয়েছে।
৫. সুশৃঙ্খল আচরণের সনদ, বৈধ লাইসেন্স ও আইনি কার্যক্রমের প্রমাণ।
৬. আন্তর্জাতিক নিয়োগদাতার কাছ থেকে অন্তত পাঁচটি লিখিত সুপারিশপত্র।
৭. নিজস্ব প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন কেন্দ্র, যেখানে আবাসন সুবিধা থাকবে।
৮. অন্যান্য শর্ত (যদিও সবকটি শর্তের বিস্তারিত খবরে উল্লেখ নেই)।
সরকারের প্রতি আহ্বান
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, যাতে কোনো এজেন্সির মধ্যে অসন্তোষ না থাকে এবং কঠোর মানদণ্ডগুলো যেন শেষ পর্যন্ত অল্প কয়েকটি প্রভাবশালী এজেন্সিকে সুবিধা না দেয়।







