নির্বাসিত শেখ হাসিনার মন্তব্য: ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে লাখ লাখ সমর্থক ভোট বয়কট করবে’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লাখ লাখ সমর্থক আগামী জাতীয় নির্বাচন বয়কট করবে। তিনি আরও মন্তব্য করেন যে, তাঁর দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করে সরকার গঠিত হলে তিনি দেশে ফিরবেন না, ভারতেই অবস্থান করবেন।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ই-মেইলে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। ভারতে নির্বাসনের পর এটিই কোনো সংবাদমাধ্যমে তাঁর প্রথম প্রকাশিত সাক্ষাৎকার। এই সাক্ষাৎকার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এও প্রকাশিত হয়েছে।

নির্বাচনের বৈধতা ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা

শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেছেন, পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনি বৈধতা থাকতে হবে। বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার করেছে। তবে মে মাসে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন:

“আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কেবল নীতিবিরুদ্ধই নয়, আত্মবিধ্বংসীও বটে। কারণ, আওয়ামী লীগের লাখো সমর্থক রয়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ভোট দেবেন না। এত মানুষকে বঞ্চিত করে আপনি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবেন না।” তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করে সরকার গঠন করা হলে তিনি দেশে ফেরত আসা থেকে বিরতই থাকবেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কোনো পক্ষের সঙ্গে গোপন আলোচনা চলছে কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও আইনি প্রক্রিয়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ১৫ বছরের শাসনকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হলেও আন্তর্জাতিক মহলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের অভিযোগ ছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও প্রধান বিরোধী দল বয়কট করায় সমালোচনা বাড়ে।

  • আইনি চ্যালেঞ্জ: গত বছর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। সেই আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি চলছে এবং আগামী ১৩ নভেম্বর একটি রায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
  • অভিযোগ অস্বীকার: সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, “আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহার বা অন্য অভিযোগের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওগুলো সব রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসন।” তিনি আদালতের সাজানো শুনানিতে তাঁকে আগেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্রের প্রত্যাশা

এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, আওয়ামী লীগ আবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে তিনি দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের সংশ্লিষ্টতা নাও থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন।

“এটা তো কেবল আমি বা আমার পরিবারের ইস্যু না। বাংলাদেশের জন্য আমরা সবাই যে ভবিষ্যৎ কামনা করি, তা নিশ্চিত করতে সংবিধানের শাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবার আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।” দেশে ফেরার শর্ত: দেশে ফেরার বিষয়ে তাঁর শর্ত হলো—”যদি বৈধ সরকার থাকে, সংবিধানের প্রাধান্য রক্ষিত হয় এবং সত্যিকার অর্থে দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে, আমি অবশ্যই দেশে ফিরতে চাইবো।”

এদিকে, রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top