যুদ্ধবিরতি ভেঙে আফগানিস্তানে পাকিস্তানি বিমান হামলা: ৩ ক্রিকেটারসহ নিহত অন্তত ১০, সংকট নিরসনে দোহায় জরুরি বৈঠক

স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ভেঙে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। আফগান কর্মকর্তাদের মতে, শুক্রবার রাতে চালানো এই হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও শিশুও রয়েছে। এই হামলার পর দুই দেশের সীমান্তে প্রায় এক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর তৈরি হওয়া সাময়িক শান্তি ভঙ্গ হলো।

প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি, ক্রিকেটে শোক

পাকতিকা প্রদেশের তিনটি স্থানে পাকিস্তানের বিমান হামলার খবর নিশ্চিত করে একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান কর্মকর্তা এএফপি-কে বলেন, “পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ভেঙেছে এবং আফগানিস্তান এর প্রতিশোধ নেবে।” প্রাদেশিক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হামলায় দুই শিশুসহ দশজন বেসামরিক লোক নিহত এবং আরও ১২ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, এই হামলার ফলে ক্রীড়াঙ্গনেও গভীর শোক নেমে এসেছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (ACB) জানিয়েছে, পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেরার পথে তিনজন আফগান ক্রিকেটারসহ আরও পাঁচজন এই ‘কাপুরুষোচিত হামলায়’ নিহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে এসিবি আগামী মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে নির্ধারিত ত্রি-দেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

টিটিপি-কে লক্ষ্য: পাকিস্তানের যুক্তি

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আফগান সীমান্ত এলাকায় ‘সুনির্দিষ্ট বিমান হামলা’ চালিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ছিল হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ—যা মূলত টিটিপি-র (TTP) সঙ্গে যুক্ত একটি স্থানীয় গোষ্ঠী। ইসলামাবাদ দাবি করেছে, এই গোষ্ঠীটিই সম্প্রতি একটি সামরিক ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণে সাতজন পাকিস্তানি আধা-সামরিক সেনাকে হত্যা করেছে।

আফগানিস্তান টিটিপি-কে আশ্রয় দিচ্ছে বলে পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসলেও কাবুল তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। এই নিরাপত্তা ইস্যুটিই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির মূল কারণ।

সংকট নিরসনে দোহায় কূটনৈতিক তৎপরতা

হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ নিশ্চিত করেছেন, শনিবার দোহায় পাকিস্তানি পক্ষের সঙ্গে সংকটকালীন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এই আলোচনায় অংশ নিতে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লাহ মুহাম্মদ ইয়াকুবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দোহায় পৌঁছেছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এবং গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল অসীম মালিকও আলোচনার জন্য দোহায় যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ হামলার আগে পর্যন্ত আফগান সীমান্তে সংঘর্ষে ৩৭ জন নিহত এবং ৪২৫ জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল জাতিসংঘ।

সূত্র- আলজাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top