খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভে সহিংসতা: সংঘর্ষে সেনা সদস্যসহ ২০ আহত, বাজারে অগ্নিসংযোগ

পার্বত্য চট্টগ্রামে এক পাহাড়ি কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ ব্যানারে চলা অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এই সংঘর্ষে সিন্দুকছড়ি সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. মাজহার হোসেন রাব্বানী-সহ ১১ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুর রহমান-সহ আরও অন্তত ৯ জন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনা থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণ বিরোধী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে অবরোধকারীরা সড়ক অবরোধ করলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে তর্কাতর্কি থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সেনাসদস্যদের ওপর হামলা করে, যা বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নেয়।

সংঘর্ষের পর রামেসু বাজারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ও বসতঘর পুড়ে যায়। একই সময়ে কয়েকটি মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান জ্বলছে। জানা গেছে, বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর অধিকাংশেরই মালিক পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ।

এই ঘটনার বিষয়ে গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও সংঘাত হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত।’

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট

গত মঙ্গলবার রাতে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ ব্যানারে শনিবার ভোরে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শনিবার দুপুর ২টা থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

রবিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘একটি পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও বর্তমান পরিস্থিতি

সংঘর্ষের বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও জানান, অবরোধের কারণে আটকে পড়া সাজেকসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রের সব পর্যটককে নিরাপদে খাগড়াছড়ি সদরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং শহরের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top