জাতিসংঘে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা: নির্বাচন, অর্থনীতি ও সংস্কার নিয়ে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনা

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, অর্থনৈতিক সংস্কার, এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন।

বিশ্বব্যাংকের সভাপতির সঙ্গে বৈঠক

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, গণতান্ত্রিক রূপান্তর, রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতের কাঠামোগত সংস্কার, চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকীকরণ, এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি হওয়া জাতীয় সম্পদ দ্রুত পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।

অজয় বঙ্গা এই সংকটময় সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন এবং বলেন যে, “সুদূরপ্রসারী সংস্কার ছাড়া টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।” জবাবে প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে এবং চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকীকরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্বব্যাংককে আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, আধুনিকায়িত চট্টগ্রাম বন্দর নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যসহ পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি হবে।

প্যারিসের মেয়রের সঙ্গে আলোচনা

নিউইয়র্কে প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গে এক বৈঠকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম এবং বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে।” তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি ভিত্তিপ্রস্তর হবে। মেয়র হিদালগো সংকটময় সময়ে তার নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল বৃদ্ধির আহ্বান জানান। উভয় নেতা অলিম্পিকে সামাজিক ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আরও কয়েকটি বৈঠকে ড. ইউনূস বিভিন্ন বিশ্বনেতার সঙ্গে আলোচনা করেন।

  • অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন হবে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং এতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি থাকবে।
  • নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে আলোচনায় তিনি স্বাস্থ্যবীমা, পেনশন ব্যবস্থা এবং মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সামাজিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরস আধানোম গেব্রিয়াসিসের সঙ্গে তিনি স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময় করেন।

এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top