ভারতের নির্বাচন নিয়ে নতুন বিতর্ক নিয়ে দ্য ইকোনমিস্ট এর প্রতিবেদন, রাহুলের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন অস্বস্তিতে

ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন, ভোটার তালিকায় অবিশ্বাস্য সব অনিয়ম বিজেপির পরিকল্পিত ভোট চুরির অংশ। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন— ব্যাঙ্গালুরুর উপশহর মহাদেবপুরায় একটি পরিবারে ৮০ জন ভোটার নিবন্ধন, বাড়ির নম্বর শূন্য, কিংবা ‘ডিএফওজেজিএআইডিএফ’ নামের অচেনা ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি বিজেপির ষড়যন্ত্রেরই প্রমাণ। তার দাবি, এ ধরনের হাজারো অনিয়মের মাধ্যমেই গত জাতীয় নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয়েছে।

রাহুলের এই বক্তব্য ভারতের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিআই) চাপে ফেলেছে। এর মধ্যেই বিহারে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। নভেম্বরে রাজ্যে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। ১৩ কোটিরও বেশি ভোটারের মধ্যে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ এবং ইতোমধ্যে ৬৫ লাখ নাম (মোট ভোটারের প্রায় ৮.৩ শতাংশ) বাদ পড়ায় প্রশ্ন উঠেছে।

ইসিআই দাবি করেছে, তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটাররা মৃত, ডুপ্লিকেট বা অন্যত্র চলে গেছেন। তবে কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমার রাহুলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন— আদালতে শপথপত্র দিয়ে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে, নইলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

ভারতের নির্বাচনের মান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশ্ন বাড়ছে। সুইডেনের ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের সূচক বলছে, একসময় দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় ভারতের অবস্থান এগিয়ে থাকলেও গত এক দশকে তা ক্রমেই নিচে নামছে। সমালোচকদের মতে, ২০১৪ সালের পর থেকে বিজেপির একক আধিপত্যে নির্বাচন কমিশনের ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমিশনার নিয়োগেও পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে, কারণ প্রধান বিচারপতিকে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত না করে সরকারের প্রভাব বজায় রাখা হয়েছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপি নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের পরও কমিশন ব্যবস্থা নেয়নি। মার্কিন গবেষক মিলান বৈষ্ণব সাম্প্রতিক এক গবেষণায় লিখেছেন— ভারতের নির্বাচন এখনো মুক্ত হলেও সবসময় সুষ্ঠু নয়।

এদিকে বিরোধী শিবির বিষয়টি ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। রাহুল গান্ধী বিহারে ‘ভোটার অধিকারের যাত্রা’ শুরু করেছেন। এমনকি, বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের অপসারণের দাবিও তুলেছে। তবে এ জন্য সংসদের আইন সংশোধনের প্রয়োজন, যেখানে বিজেপি ও তার মিত্রদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

বিজেপি অবশ্য সব অভিযোগ নাকচ করেছে। উল্টো কংগ্রেসকেই পাল্টা অভিযোগ করেছে দলটি। বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের দাবি— কংগ্রেসেরও বিপুল সংখ্যক ‘সন্দেহজনক ভোটার’ রয়েছে।

সূত্র- দ্য ইকোনমিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top