জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫: ৮৪ দফা ও ৮ দফা অঙ্গীকার নিয়ে খসড়া গেল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় অর্জিত গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এই খসড়ায় মোট ৮৪টি দফা এবং এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য ৮টি অঙ্গীকারনামা যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই খসড়ার ভাষা, শব্দ বা বাক্যগঠন নিয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে আগামী ২০ আগস্ট বিকেল ৪টার মধ্যে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

সনদের মূল ভিত্তি: জনগণের অধিকার ও সাংবিধানিক কনভেনশন

এই সনদের অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলোকে জনগণের ইচ্ছাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে এই সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সনদের প্রতিটি বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে এর ভিন্নতা থাকলে এই সনদের বিধানগুলো প্রাধান্য পাবে।

সনদের মূল প্রস্তাবসমূহ

এই সনদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা। এতে সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন এবং নতুন আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে।

এছাড়াও, সনদে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। একইসঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের বিচার, তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান এবং শহীদ পরিবারগুলোকে উপযুক্ত সহায়তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন

সনদে একমত হয়েছে যে, কোনো বিধান বা প্রস্তাবের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার থাকবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর। এই সনদের প্রতিটি বিধান আইনগতভাবে বলবৎ থাকবে এবং এর বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

সর্বোপরি, সনদে বলা হয়েছে যে, যেসব প্রস্তাব অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top