বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ দেখালেও ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা, ডলার সংকট এবং রপ্তানি আয়ে ঘাটতির মতো বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, তবে আর্থিক খাতের দীর্ঘদিনের ক্ষতগুলো এখন প্রকাশ্যে আসছে।
মূল্যস্ফীতিতে স্বস্তি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির শঙ্কা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, দেশের মূল্যস্ফীতির হার একসময় ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলেও তা এখন কমে এক অঙ্কে নেমে এসেছে। জুন ২০২৫-এ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৩৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সহায়ক রাজস্ব নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এই সাফল্য অর্জন করেছে।
তবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪.২২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫০ শতাংশ থাকলেও তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব দাবি করেছেন যে, তাদের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থনীতি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং রপ্তানি আয় প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডলার সংকট ও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা
দেশে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ডলার সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাওয়ায় ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে গত অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বেশি এসেছে। প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি খাতে এই প্রবৃদ্ধি ডলারের সরবরাহ বাড়াতে সাহায্য করছে। তবে, আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভ এখনো ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোই প্রধান চ্যালেঞ্জ
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের ব্যাংকিং খাত মারাত্মক সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১২টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি শক্তিশালী সরকারি ইসলামী ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করা এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, এই পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪৮ শতাংশ থেকে ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত। সরকার খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, যেসব ব্যাংকের পরিচালনা ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল, তাদের বড় কোনো সমস্যা হয়নি। তবে, যেসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না, তাদের একীভূত করা ছাড়া উপায় নেই।