আজ, ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর তাৎপর্যপূর্ণ দিন। গত বছর এই দিনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এই দিনটি একদিকে যেমন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শাসনের সমাপ্তি ঘটিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গণঅভ্যুত্থান ও ১৫ বছরের শাসনের অবসান
গত বছর জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তুমুল ছাত্র বিক্ষোভ পরবর্তীতে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সরকারবিরোধী এই আন্দোলনের মূল কারণ হিসেবে আন্দোলনকারীরা ১৫ বছরের শাসনকালে সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের অভাবকে দায়ী করে। জনগণের এই তীব্র বিক্ষোভের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। তার প্রস্থানের পর বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যার প্রধান লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা।
গত এক বছরের প্রেক্ষাপট: প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত এক বছর দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। জনগণের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
- রাজনৈতিক সংস্কার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করার মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। এসব পদক্ষেপ আগামী নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের আস্থা বাড়াতে সাহায্য করছে।
- দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম: বিগত সরকারের সময়কার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ জনমনে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার আশা জাগিয়েছে।
- অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, যার মধ্যে মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের সংকট অন্যতম। তবে, নতুন সরকার এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জনগণের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যতের পথ
গত এক বছরে বাংলাদেশের মানুষ একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা প্রত্যক্ষ করেছে। ৫ আগস্টের এই পরিবর্তনকে অনেকেই স্বৈরাচারী শাসনের অবসান এবং গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। তবে, সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া এবং দেশে স্থায়ী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা—এই দুটি প্রধান লক্ষ্য অর্জনের ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
আজকের এই দিনে, দেশের মানুষ সেই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করছে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে।