আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল: “শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের অপরাধ ১৯৭১ সালের দখলদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে”

প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সংঘটিত সহিংসতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের সঙ্গেও তার তুলনা চলে না। তার ভাষায়, “শেখ হাসিনা ও তার দোসররা এমন জঘন্য অপরাধ করেছে, যা ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনীও করেনি।”

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। “জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এটি “জুলাই পুনর্জাগরণ” শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহতদেরকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা, নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানো— এসব কেবল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম অধ্যায়েই দেখা যায়। কেউ বলতেই পারেন, ২৫ মার্চ রাতেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। হ্যাঁ, তা ঘটেছিল। কিন্তু সেগুলো করেছিল একটি দখলদার বাহিনী। আমরা তো তখন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক ছিলাম, একটি স্বাধীন সরকারের অধীনে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৭১ সালের বর্বরতার অনেক দৃষ্টান্ত ইতিহাসে রয়েছে, কিন্তু এমন নির্মমতা, যেটা আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেখেছি— তা ব্যতিক্রমী। আহত একজনকে যখন তার বন্ধু ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমন ফুটেজ আমরা দেখেছি, যা ১৯৭১ সালেও দেখা যায়নি।”

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আশা প্রকাশ করেন, এইসব হত্যাকাণ্ডের বিচার বর্তমান সরকারই নিশ্চিত করবে। তার মতে, “এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সময় মতো ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। এই বিষয়ে জনগণকে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।”

তিনি আরও বলেন, “এই বিচারের প্রমাণ ও নথি এমনভাবে সংরক্ষিত হবে, যাতে ভবিষ্যতের কোনো সরকার ইচ্ছা করলেও এর বিচার থেকে পিছিয়ে আসতে না পারে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি হোক কিংবা জামায়াত, আগামীতে যারা-ই ক্ষমতায় আসুক, তারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে, কারণ তারাও একসময় নিপীড়নের শিকার হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের। এ সময় জুলাই মাসে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় এবং “জুলাই কার্নেজের বিচার” শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top