মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী জোর দিয়ে বলেছেন, যে সম্মিলিত শক্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বাধ্য করেছে, সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে অবশ্যই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনেও একতাবদ্ধ থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বেসরকারি সংস্থা ‘সেইভ বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, শেখ হাসিনাকে অপসারণের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে এক গৌরবময় স্থান অর্জন করেছে। এই অর্জনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সকল বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পুনরায় উল্লেখ করেন, যে ঐক্য স্বৈরাচারী হাসিনাকে দেশছাড়া করতে বাধ্য করেছে, সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে অবশ্যই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণেও অবিচল থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তির মধ্যে কিছু ফাটল দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত সহনশীলতার পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে এখনো অনেক কাজ বাকি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে; তবে বিভেদ তৈরি করে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, পলাতক ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে তাদের চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, শেখ হাসিনার মতো একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসন লাভ করেছে। তিনি জানান, প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অধিকার আদায়কারী রাষ্ট্র হিসেবে ভূষিত করেছে। এই মর্যাদার আসন যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং ব্যক্তিগত বা দলীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ যেনো শহীদদের রক্তে রঞ্জিত এই বিজয়কে ম্লান না করে।
রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ‘সেইভ বাংলাদেশ’ সংস্থার কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, এই সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে সংগঠিত করে জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউসের সামনে দিনের পর দিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের কাছে বাংলাদেশের গুম, খুন ও গণতন্ত্রহীনতার চিত্র তুলে ধরেছে। একসময় তারা বিমান ভাড়া করে বাংলাদেশে গিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণের কর্মসূচিও গ্রহণ করেছিল, যা পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুরোধে স্থগিত করে তারা যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের কর্মসূচি জোরদার করে।
ফজল আনসারী আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে পড়া সকল প্রথা ও প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠনে নিবেদিত এবং জনগণের দীর্ঘদিনের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার বাংলার সাবেক সম্পাদক এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা। তার বক্তব্যে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জাহিদ খানের সভাপতিত্বে এবং কামরুন কনা ও সৈয়দ সালেহ মনসুর পরশের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় শাহাদাত সোহরাওয়ার্দী, কবিতা দিলাওয়ার, মজনু মিয়া, তুহিন ইসলাম, নেসার আহমেদসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।