দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নথি তথা ‘ট্রাভেল পাস’ হাতে পেয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আবেদন করার মাত্র এক দিনের মধ্যেই তাঁর এই আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁর দেশে ফেরার পথে থাকা শেষ প্রায়োগিক বাধাটিও অপসারিত হলো এবং তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেল।
আগামী ২৫ ডিসেম্বরকে ঘিরে এখন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের মাঝে বইছে এক অন্যরকম রাজনৈতিক হাওয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, সেই দিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে রাজধানী জুড়ে নেওয়া হচ্ছে এক বিশাল আয়োজন। বিএনপি গঠিত অভ্যর্থনা কমিটি ইতিমধ্যে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সার্বিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি তাঁর অসুস্থ মা ও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন।
তারেক রহমানের এই দীর্ঘ বিবাসের ইতিহাস শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। এক-এগারোর পরবর্তী সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারামুক্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় প্রবাসে থাকলেও দেশের রাজনীতির নাড়ি নক্ষত্র তাঁর নখদর্পণে ছিল। বিশেষ করে ২০১৮ সালে বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সুদূর লন্ডন থেকেই প্রযুক্তির সহায়তায় দলকে সুসংগঠিত রাখেন। গত সাত বছর ধরে তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের ত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি রাজপথে টিকে ছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার চূড়ান্ত ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার সাজা উচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিলের ফলে তিনি এখন আইনত সম্পূর্ণ মুক্ত। অন্যদিকে, তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়াও এখন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ও আদালতের খালাসের মাধ্যমে পুরোপুরি মুক্ত জীবন অতিবাহিত করছেন। সব মিলিয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই প্রত্যাবর্তন কেবল বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির মোড় পরিবর্তনে এক বিশাল মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে।







