রাজধানীর শাহবাগ মোড় আজ আবার এক ঐতিহাসিক জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ শাহবাগকে উত্তাল করে তোলে। দুপুরের আগে থেকেই ছোট ছোট মিছিল ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানুষ জড়ো হতে শুরু করলেও বিকেলের দিকে তা একটি বিশাল ‘আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশে’ রূপ নেয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলেও লোকসমাগম কমেনি, বরং হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা না করা পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশের নেতৃত্বে থাকা ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম অত্যন্ত জোরালো ভাষায় তাঁর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, যতক্ষণ না ওসমান হাদির খুনিদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে, ততক্ষণ আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরবেন না। একই সঙ্গে তিনি দেশের সকল ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। সমাবেশের পরিবেশ ছিল স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত। ‘ফ্যাসিবাদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’—এমন অসংখ্য প্রতিবাদী স্লোগান শাহবাগের বাতাসকে ভারি করে তুলছিল। আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়কে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করেন, যা উপস্থিত জনতা করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানায়।
সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নিয়ে কথা বলেন। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মুনতাসীর আহমেদ কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা বাংলাদেশের মাটিতে বসে ভারতীয় আধিপত্যবাদের দালালি করবে, তাদের আর একচুলও ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যদিকে, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান তাঁর বক্তব্যে পার্শ্ববর্তী দেশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়া একটি নিন্দনীয় কাজ। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নির্ভয়ে দেশের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রশাসনিক সংস্কার ও নিরাপত্তার প্রশ্নেও সমাবেশে কড়া দাবি জানানো হয়। ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ তাঁর বক্তব্যে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি তোলেন। একই সঙ্গে তিনি এই ঘটনার ব্যর্থতার দায়ভার গ্রহণ করে বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। সমাবেশ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়, শরিফ ওসমান হাদি হত্যার খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ঘটনার দায় স্বীকার না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। রাজপথের এই লড়াইকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই হিসেবে উল্লেখ করে আন্দোলনকারীরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।







