পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনন্য ভূমিকাকে ভারত সবসময় কিছুটা ছোট করে দেখানোর এক ধরনের প্রবণতা বজায় রাখে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিজয় দিবসের শুভেচ্ছাবার্তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরেন। তিনি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেন যে, বাংলার অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনী এই বিজয় এত দ্রুত অর্জন করতে পারত না।
উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, ভারত বিশেষ করে কলকাতায় বিজয় দিবসকে তাদের নিজস্ব সেনাশক্তির সাফল্য হিসেবে ‘ইস্টার্ন কমান্ড দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। তাদের মতে, এটি ছিল মূলত তাদের সেনাবাহিনীর একটি সামরিক বিজয়। তবে তৌহিদ হোসেন মনে করিয়ে দেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তারা বিজয় অর্জন করেছে এটি সত্য হলেও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাদের এই বিজয়ের পথ সুগম হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ ৯ মাসের ত্যাগের বিনিময়ে। তিনি বিভিন্ন সামরিক বিশেষজ্ঞ ও লিটারেচারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ লড়াই পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মানসিকভাবে ও কৌশলগতভাবে দুর্বল বা ‘সফেন’ করে রেখেছিল। যদি মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকে এই ক্ষেত্র প্রস্তুত না করতেন, তবে ভারতের পক্ষে এই বিজয় অর্জন করতে দীর্ঘ সময় লাগত এবং তাদের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হতো অনেক বেশি।
সামরিক ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ করে তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিশাল অবদানকে অস্বীকার করতে চান, তাদের আসলে সামরিক ইতিহাস বা সমরবিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক কোনো জ্ঞান নেই। তিনি যোগ করেন যে, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে প্রতিরোধ শুরু হলেও জুন মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দেশজুড়ে পুরোপুরি সক্রিয় ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। টানা কয়েক মাসের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলেই চূড়ান্ত বিজয় ত্বরান্বিত হয়েছিল। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো যৌক্তিক অবকাশ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। তিনি জানান যে, মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার জন্য কোনো ‘ট্রাভেল পাস’ বা ভ্রমণ নথির আবেদন করেননি। সামগ্রিকভাবে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্য ঐতিহাসিক সত্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার একটি বলিষ্ঠ প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।







