শরিফ ওসমান হাদি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে: সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তাঁর সুচিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত মেডিকেল টিম গঠন করেছে। এই টিম মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার সব রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছে। বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে তাঁকে সেখানে ভর্তি করা হয়।

শরীফ মো. ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন ও অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তিনি এখনো জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। নিউরোসার্জনদের সর্বশেষ মূল্যায়ন অনুযায়ী, হাদির মস্তিষ্কের (ব্রেন) ইস্কেমিক পরিবর্তন ও ফোলা বা ইডেমা কমেনি। ফলে এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ‘টাইম উইন্ডো’ (সময়সীমা)-কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরে হাদির চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জন এবং হাদির চিকিৎসায় যুক্ত ডা. আব্দুল আহাদ

ব্রেন ইনজুরি ও চ্যালেঞ্জসমূহ

  • সংকটাপন্ন অবস্থা: হাদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্সে ভর্তির পর থেকেই নিউরোসার্জারি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিম যৌথভাবে তাঁর চিকিৎসা শুরু করে। নতুন করে করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, হাদির বাম পাশের ইস্কেমিক পরিবর্তন অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ব্রেনে ফোলা বা ইডেমা এখনো বিদ্যমান।

  • ভেন্টিলেশন ও সাপোর্ট: হাদির ব্রেইন ছাড়া বাকি অর্গানগুলো (কিডনি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস) বর্তমানে কৃত্রিম ভেন্টিলেশনের সহায়তায় সচল রাখা হয়েছে। তাঁর ভাই ওমর বিন হাদি সিঙ্গাপুর থেকে জানিয়েছেন, হাদির ব্রেইনের ভিতরে বুলেটের টুকরো আটকে আছে, যার জন্য অপারেশন প্রয়োজন হলেও তাঁর স্বাস্থ্য বর্তমানে অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত নয়। ওমর উল্লেখ করেন, এই ধরনের অপারেশনের জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সেরা হলেও, বর্তমানে সিঙ্গাপুর থেকে লন্ডনে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তাঁর নেই।

  • নিউরোলজিক্যাল রেসপন্স: চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাদির জিসিএস (GCS) স্কোরে এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ, নিউরোলজিক্যাল রেসপন্সে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি বা অবনতি—কোনোটিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ব্রেন স্টেমে আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুলার সিস্টেমেও চাপ তৈরি হয়েছে, যা চিকিৎসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

চিকিৎসায় ‘টাইম উইন্ডো’র গুরুত্ব

চিকিৎসকদের মতে, এই পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সময়। ব্রেন ইনজুরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বা ‘টাইম উইন্ডো’ থাকে, যার মধ্যে যদি রোগীর শরীর ইতিবাচক সাড়া দেয়, তবে পরবর্তী অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই সময়সীমার মধ্যেই হাদির শরীর কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় কি না, সেদিকেই এখন চিকিৎসকদের নিবিড় নজর।

ফুসফুসের অবস্থা ও গুজবের জবাব

ডা. আব্দুল আহাদ আরও জানান, হাদির ফুসফুসের সর্বশেষ সিটি স্ক্যানেও আগের মতোই রক্তের উপস্থিতি দেখা গেছে। এই জটিলতার কারণেই বাংলাদেশে থাকাকালীন তাঁর বুকে চেস্ট ড্রেন দেওয়া হয়েছিল এবং সিঙ্গাপুরেও সেই জটিলতা মাথায় রেখেই শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা চলছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা দাবিকে চিকিৎসকরা নাকচ করেছেন। ডা. আহাদ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, হাদি চোখ খুলেছেন বা অবস্থার উন্নতি হয়েছে—এ ধরনের কোনো তথ্য সত্য নয়। তাঁর অবস্থা এখনো স্ট্যাটিক, অর্থাৎ আগের জায়গাতেই রয়েছে। চিকিৎসকরা জ্ঞান ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে এখনই কোনো নিশ্চিত পূর্বাভাস দিতে পারছেন না।

তবে চিকিৎসকরা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেক সময় অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটে। সেই আশাতেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাদির পরিবার ও সহকর্মীরা দেশবাসীর কাছে তাঁর দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া এবং অনুমানভিত্তিক তথ্য না ছড়িয়ে দায়িত্বশীল থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top