ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একটি অনুষ্ঠানে এক নারী চিকিৎসকের হিজাব টেনে নামানোর ঘটনায় তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ৭৫ বছর বয়সী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলগুলো এবং ধর্মীয় নেতারা এই আচরণকে নারীর মর্যাদা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন।
ঘটনার বিবরণ ও ভিডিও বিতর্ক
সোমবার বিহার সচিবালয়ে একটি অনুষ্ঠানে ১২০০-এর বেশি নবনিযুক্ত ‘আয়ুষ’ চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছিল। ওই সময় হিজাব পরিহিত এক নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে মঞ্চে এগিয়ে গেলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার হঠাৎ করে তাঁর হিজাব টেনে নিচে নামান।
ভিডিওতে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী তাঁকে থামানোর চেষ্টা করছেন। একই মঞ্চে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যসচিব দীপক কুমার ও রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডেকে এ সময় হাসতে দেখা যায়, যা নিয়েও আলাদা করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে নীতীশ কুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিলেও, সেখানে হিজাব সংক্রান্ত এই ঘটনার কোনো উল্লেখ করেননি।
বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনা
এই ঘটনার পর বিরোধী দলগুলো একযোগে নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনায় নেমেছে:
আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। দলটির দাবি, মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে এমন আচরণ করলে রাজ্যে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে?
বিরোধী কংগ্রেস দল ভিডিওটি পোস্ট করে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছে। তাদের বক্তব্যে এই আচরণকে ‘ঘৃণ্য’ ও ‘ক্ষমার অযোগ্য’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রাজ্যের সর্বোচ্চ পদে আসীন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন কাজ করায় প্রমাণ হয় বিহারে নারীরা কতটা অনিরাপদ।
বিহারের প্রধান বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নীতীশ কুমারের মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলটির মুখপাত্র এজাজ আহমেদ এই ঘটনাকে নারীদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং জেডিইউ-বিজেপি জোটের মনোভাবের প্রতিফলন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক আলোচনা
দেওবন্দি আলেম ক্বারী ইসহাক গোরা মন্তব্য করেছেন, একজন নারী চিকিৎসকের হিজাব টানার দৃশ্য দেখে সারা দেশের মানুষের রক্ত ফুটছে। তাঁর মতে, নারীর সম্মান নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি প্রকাশ্যে এমন আচরণ সম্পূর্ণ বিপরীত বার্তা দেয়। এই ভিডিও ঘিরে ভারতের বাইরে পাকিস্তানেও আলোচনা শুরু হয়েছে, যেখানে এটিকে মুসলিম নারীদের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে সমালোচনা করা হয়েছে।
জেডিইউ’র অভিযোগ প্রত্যাখ্যান
তবে নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির মুখপাত্র নীরজ কুমার দাবি করেন, বিহারে নারী ও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নীতীশ কুমার অনেক কাজ করেছেন। সংখ্যালঘু কল্যাণমন্ত্রী জামা খান বলেন, বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, নীতীশ কুমার ওই নারী চিকিৎসকের প্রতি স্নেহ প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কেবল মেয়েটির সাফল্য সবাইকে দেখানো।







