রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংসদ সদস্যদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা ২০২৫ জারি

জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং আসন্ন নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সরকার ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও রিটেইনার নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন ও জারি করেছে।

সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-৪ অধিশাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনমূলে এই নীতিমালাটি জারি করা হয়, যেখানে স্বাক্ষর করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি

নীতিমালার উদ্দেশ্য ও কাঠামো

উদ্দেশ্য: প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান ও রিটেইনার নিয়োগ অনুমোদন নিশ্চিত করা; রাজনৈতিক প্রভাব ও ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী গঠন প্রতিরোধ করা; নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন রোধ করা এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।কাঠামো: নীতিমালায় মোট সাতটি অধ্যায়১৯টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স সংক্রান্ত বিধান, রিটেইনার নিয়োগের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা এবং আপিল ও ক্ষমতা সংরক্ষণ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

সংজ্ঞা:

    • রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি: সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বর্তমান বা সাবেক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি।

    • পদপ্রার্থী: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলকারী কোনো ব্যক্তি।

    • রিটেইনার: সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ও অনুমোদিত সশস্ত্র ব্যক্তি।

লাইসেন্স সংক্রান্ত বিধান

  • প্রাপ্তির যোগ্যতা: সরকার কর্তৃক স্বীকৃত রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী হতে হবে; গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক যাচাইকৃত প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি বিদ্যমান থাকতে হবে; শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং অস্ত্র সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান সংক্রান্ত শর্ত শিথিলযোগ্য হবে।

  • লাইসেন্সের মেয়াদ ও বাতিল: এই নীতিমালার অধীনে অনুমোদিত লাইসেন্সের মেয়াদ হবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ দিন। এই সময়সীমার পর লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ আগ্নেয়াস্ত্র নিজ দখলে রাখলে প্রচলিত আইন মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রিটেইনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান

  • নিয়োগের শর্ত: কেবল প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে রিটেইনার নিয়োগ অনুমোদনযোগ্য হবে। রাজনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে রিটেইনার নিয়োগ করা যাবে না।

  • রিটেইনারের যোগ্যতা: অবশ্যই বাংলাদেশি নাগরিক ও ন্যূনতম ২৫ বছর বয়স্ক হতে হবে; অপরাধমুক্ত ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্ত হতে হবে; আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (সশস্ত্র বাহিনী বা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্যগণ অগ্রাধিকার পাবেন) এবং সরকারি হাসপাতাল থেকে মেডিকেল ফিটনেস সনদপ্রাপ্ত হতে হবে।

  • নিয়োগ পদ্ধতি: পদপ্রার্থী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন দাখিল করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক যাচাই সম্পন্ন করবেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তা যাচাই তিন কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অবিলম্বে রিটেইনার লাইসেন্স অনুমোদন প্রদান করবেন।

  • সংখ্যা: একজন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ একজন রিটেইনার নিয়োগযোগ্য হবে। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর রিটেইনারের মেয়াদও শেষ হবে।

অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও সীমাবদ্ধতা

  • অস্ত্র ব্যবস্থাপনা: রিটেইনারের অনুকূলে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ইস্যু করা হবে না। রিটেইনার কেবল আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী হবেন, অস্ত্রের সকল দায় লাইসেন্সধারীর উপর বর্তাবে।

  • সীমাবদ্ধতা: শুধুমাত্র আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সীমিত ক্যালিবারের (এনপিবি) অস্ত্র অনুমোদনযোগ্য হবে। একাধিক অস্ত্র অথবা স্বয়ংক্রিয় বা সামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না।

আচরণবিধি ও আপিল

  • আচরণবিধি: অস্ত্র বহনকালে সর্বদা লাইসেন্স ও অনুমোদন সাথে রাখতে হবে। নিরাপত্তা ব্যতীত অন্য কোনো কাজে অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না এবং এটি হস্তান্তরযোগ্য হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে পালন করা বাধ্যতামূলক।

  • নির্বাচনকালীন বিধান: এই নীতিমালা নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আচরণবিধির পরিপূরক হবে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তা স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

  • বাতিল ও আপিল: অপব্যবহার, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বা অন্য কোনো নিয়ম লঙ্ঘিত হলে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে লাইসেন্স বা রিটেইনার অনুমোদন তাৎক্ষণিক বাতিল করতে পারবে। তবে বাতিল বা স্থগিতের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আপিল করা যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top