আগামীকাল মহান বিজয় দিবস: প্যারাশুটিং করে বিশ্বরেকর্ডের মাধ্যমে জাতির বীরত্ব উদ্‌যাপন পরিকল্পনা

বাঙালি জাতির গৌরব ও বীরত্বের প্রতীক মহান বিজয় দিবস আগামীকাল মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫)। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার এই দিনটিকে জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিপুল উদ্দীপনার সাথে উদ্‌যাপন করবে। ১৯৭১ সালের এই দিনে ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল।

শ্রদ্ধা নিবেদন ও আনুষ্ঠানিকতা

  • তোপধ্বনি: পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে স্মরণ করে দিবসটি শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে।

  • সাভারে শ্রদ্ধাঞ্জলি: বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

  • মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা: এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এছাড়াও, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

বর্ণিল আয়োজন ও বিশ্বরেকর্ড প্রচেষ্টা

  • পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা: দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

  • সাজসজ্জা: ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো ইতোমধ্যেই জাতীয় পতাকাসহ ব্যানার, ফেস্টুন এবং রঙিন পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।

  • প্যারাশুটিং বিশ্ব রেকর্ড: মহান বিজয় দিবস দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালানো হবে।

  • ফ্লাই-পাস্ট ও ব্যান্ড শো: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে শহরের তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে। সেখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে।

  • স্কাইডাইভ প্রদর্শন: ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবেন, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হবে এবং এটি একটি নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করবে।

সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য কার্যক্রম

  • বিজয় মেলা ও প্রতিযোগিতা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

  • শিক্ষার্থীদের সমাবেশ: সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবে।

  • সংগীত পরিবেশনা: আগামীকাল বিকেল ৩টা থেকে নগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও, নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।

  • সংবর্ধনা ও স্মারক ডাকটিকিট: রাষ্ট্রপতি কাল বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানাবেন। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।

প্রচার ও উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার

  • গণমাধ্যমে প্রচার: বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

  • বিনামূল্যে সিনেমা ও জাদুঘর: সারা দেশের সিনেমাহলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র এবং অডিটোরিয়ামগুলোতে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার থাকবে।

  • নৌযান দর্শন: চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন জেটিতে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

  • বিশেষ প্রার্থনা ও খাবার: শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এছাড়াও, হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top