১৫০ টাকা ছাড়ালো পেঁয়াজ: ভারত থেকে আমদানি শুরু, দাম কমার প্রভাব বাজারে

দেশের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর অবশেষে সরকার পেঁয়াজ আমদানির জন্য ভারতকেই বেছে নিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দিয়েছে।

আমদানির অনুমতির এই ঘোষণার পরপরই দেশের খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামে কমার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

আইপি প্রদান এবং শর্তাবলী

  • আমদানির পরিমাণ: মোট ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

  • আমদানিকারক ও সীমা: ৫০ জন আমদানিকারককে এই আইপি দেওয়া হয়। তবে শর্ত অনুযায়ী, কোনো আমদানিকারকই ৩০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। এছাড়া, কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য আমদানির আবেদন করতে পারবেন না।

  • আইপি-এর মেয়াদ: আমদানির অনুমতির এই আইপির মেয়াদ থাকবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত

  • বাছাই প্রক্রিয়া: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইপির জন্য ৩ হাজার ৫০০টি আবেদন জমা ছিল। এর মধ্য থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে আজ ৫০টি আবেদন বাছাই করা হয়েছে। সার্ভারে যাঁরা আগে প্রবেশ করতে পেরেছেন, তাঁরাই আইপির জন্য বিবেচিত হয়েছেন।

বিলম্বিত সিদ্ধান্ত এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া

খুচরা বাজারে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গতকাল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) কৃষি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার কথা জানায়। ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আইপির জন্য আবেদন করেছিলেন, তাঁরাই এই সুযোগ পাচ্ছেন। গত ৯ নভেম্বর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছিলেন, বাজারে দাম না কমলে এক সপ্তাহের মধ্যে আইপি দেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক হলে তা বন্ধ করা হবে। এক মাস পর তাঁর সেই ঘোষণা কার্যকর হলো। আমদানির ঘোষণার ফলে এক দিনের ব্যবধানে আজ ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারেও একই চিত্র। চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জের মোকামগুলোতে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।

আমদানি শুরু এবং খরচ

প্রথম আলোর বিরামপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বিকেল সোয়া চারটায় ভারত থেকে ৩০ টন পেঁয়াজবোঝাই একটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রকি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আতিক হাসান জানান, প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে ২৫০ মার্কিন ডলারে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১২ রুপি, এবং গাড়িভাড়াসহ বন্দর পর্যন্ত খরচ কেজিপ্রতি প্রায় ১৮ রুপি হতে পারে।

দেশীয় উৎপাদন ও বিকল্প উৎসের আলোচনা

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এক বছর আগে সরকারকে ভারতের ওপর নির্ভর না করে পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর, চীন ও মিয়ানমারের মতো বিকল্প উৎস খোঁজার পরামর্শ দিয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। গত চার অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বেড়েছে, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টনে পৌঁছেছে। দেশে বার্ষিক চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, “ভোক্তাস্বার্থের কথা ভেবে আজ ৫০টি আইপি দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। তবে পেঁয়াজের দাম কমে এলেই আমদানির অনুমতি বন্ধ করা হবে, কারণ কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top