বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে করা সিটি স্ক্যানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক আসায় মেডিকেল বোর্ড তাঁকে বিদেশে (লন্ডন) না নিয়ে দেশেই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি বোর্ড।
মেডিকেল বোর্ডের পর্যবেক্ষণ
মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়া আগের চেয়ে সুস্থ আছেন। তিনি বলেন:
“আমরা চেষ্টা করছি দেশেই চিকিৎসা দিতে। আমাদের বিশ্বাস, দেশের চিকিৎসায় সেরে উঠবেন তিনি। ওনার অবস্থা এর চেয়ে বেশি ক্রিটিক্যাল ছিল। তখনও সেরে উঠেছিলেন। দোয়া রাখবেন, লন্ডনে নেওয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।” ম্যাডামের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটার উন্নতি হচ্ছে। সিটি স্ক্যান, ইসিজিসহ কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে এবং সেগুলোর রেজাল্টও ভালো এসেছে। এই চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়া কিছুটা সুস্থ বোধ করায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তাঁর ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং দুই পুত্রবধূ সার্বক্ষণিক তাঁর পাশে আছেন। কতদিন সিসিইউতে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) রাখা হবে, তা ম্যাডামের শারীরিক উন্নতির ওপর নির্ভর করছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানের সমন্বয়
প্রতিদিনের মতো রোববার বিকালেও খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান তাঁর পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। তিনি লন্ডন থেকে গত শুক্রবার ঢাকায় আসার পর থেকেই শাশুড়িকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন। তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হিসেবেও রয়েছেন এবং তিনি হাসপাতালে শাশুড়ির চিকিৎসার বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। তিনি আরও বেশ কয়েকদিন দেশে থাকবেন বলে জানা গেছে।
লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী জানান, মেডিকেল বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেই কেবল তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে। তিনি নিশ্চিত করেন, বিএনপি যখনই চাইবে, কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবে, যা কোনো সমস্যা নয়। ড. চৌধুরী বলেন, “আমি রোববার সকালে ম্যাডামকে সিসিইউতে দেখে এসেছি। তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। তিনি সাড়া দিচ্ছেন। আশা করি সবার দোয়ায় তিনি ওভারকাম করবেন।”
তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কাতার সরকারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা থাকলেও, কারিগরি ত্রুটির কারণে শুক্রবার কিংবা শনিবার এটি ঢাকায় পৌঁছায়নি এবং কবে আসবে তাও অনিশ্চিত।
চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলেও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং দেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার তদারক করছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।







