ভিসা জালিয়াতি রোধে গণহারে ভিসা বাতিলের বিশেষ ক্ষমতা চাইছে কানাডা সরকার, লক্ষ্য ভারত ও বাংলাদেশ

ভিসা আবেদনে জালিয়াতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি নাগরিকদের গণহারে ভিসা বাতিলের বিশেষ ক্ষমতা চেয়েছে কানাডার কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকার। অভ্যন্তরীণ সরকারি নথিতে এই ব্যবস্থাটি বিশেষত জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া ভারতীয় এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের লক্ষ্য করে প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

কানাডার সম্প্রচার মাধ্যম সিবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ব বিভাগ (IRCC) এবং কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (CBSA) যৌথভাবে এই লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে।

১. নতুন ক্ষমতা চাওয়ার কারণ ও প্রক্রিয়া

  • জালিয়াতি শনাক্ত: ওয়ার্কিং গ্রুপটি যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে ভ্রমণ ভিসার জাল আবেদন শনাক্ত ও বাতিল করার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করছে।
  • ক্ষমতা বৃদ্ধি: এর অংশ হিসেবে, কানাডা সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বৃহৎ পরিসরে ভিসা বাতিলের ক্ষমতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
  • নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জিং দেশ: অভ্যন্তরীণ সরকারি নথিতে এই ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারত ও বাংলাদেশকে ‘নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জিং দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
  • উদ্দেশ্য: গ্রুপটির মূল কাজ হবে সন্দেহজনক বা প্রতারণামূলক আবেদন শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনে তা বাতিল করার ক্ষমতা নিশ্চিত করা। সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, এই ক্ষমতা মহামারি, যুদ্ধ বা ‘নির্দিষ্ট দেশের ভিসাধারীদের’ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতে পারে।

যদিও অভিবাসনমন্ত্রী লেনা দিয়াব এই ক্ষমতার প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে মহামারি বা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন, তিনি প্রকাশ্যে ‘নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক’ বিষয়টি বলেননি।

২. আইনি পদক্ষেপ ও উদ্বেগ

  • বিল উত্থাপন: কানাডা সরকার ইতিমধ্যেই পার্লামেন্টে একটি বিল তুলেছে, যাতে এই গণহারে ভিসা বাতিলের ক্ষমতা আইনি স্বীকৃতি পায়। সরকারের লক্ষ্য দ্রুত এই বিলটি পাশ করানো।
  • রাজনৈতিক আশ্রয়ের বৃদ্ধি: তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতীয় নাগরিকদের রাজনৈতিক আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) আবেদনের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে মাসিক আবেদন ছিল প্রায় ৫০০, যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রায় ২ হাজারে পৌঁছেছে।
  • সুশীল সমাজের উদ্বেগ: মাইগ্র্যান্ট রাইটস নেটওয়ার্কের মতো সুশীল সমাজের ৩০টিরও বেশি সংগঠন এই আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, গণহারে বাতিলের ক্ষমতা সরকারকে ‘গণবহিষ্কারের যন্ত্র’ স্থাপন করার সুযোগ দেবে।
  • IRCC-এর বক্তব্য: তবে IRCC গত মাসে সিবিসিকে জানিয়েছিল, এই নতুন প্রস্তাবটি ‘নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা পরিস্থিতি’ মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top