ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রাথমিকভাবে ২৩৭টি আসনে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
২৩৭ আসনের ঘোষণা ও সমন্বয়ের সুযোগ
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন, ২৬০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হলেও আপাতত ২৩৭ আসনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
- পরিবর্তনের সুযোগ: মির্জা ফখরুল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটি তাঁদের ‘সম্ভাব্য অ্যাপ্রোপ্রিয়েট প্রার্থীর তালিকা’। তিনি বলেন, যেসব আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলোতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করা হবে, এমনকি প্রয়োজনে ঘোষিত আসনও পরিবর্তন হতে পারে।
- শরিকদের জন্য বরাদ্দ: স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি প্রায় ৪০টি আসন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর জন্য বরাদ্দ রেখেছে।
স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, যেসব আসনে ঐকমত্য হয়নি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলো চূড়ান্ত করা হবে।
খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা: রাজনৈতিক কৌশল
আগামী নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনটি আসন—ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ ও বগুড়া-৭ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র অনুযায়ী, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেগম জিয়া নির্বাচন না করার কথা জানালেও, তালিকা চূড়ান্ত করার সময় তারেক রহমানই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তার মায়ের জন্য এই তিনটি আসন চূড়ান্ত করেন।
দলের কয়েকজন নেতার মতে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক কৌশল থাকতে পারে:
১. আস্থা ও উদ্দীপনা: অসুস্থতার মধ্যেও চেয়ারপারসনের নাম তালিকায় রাখা নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ও উদ্দীপনা বাড়াবে।
২. প্রত্যাশিত অপেক্ষা: এটি একই সঙ্গে দলের তিনজন আগ্রহী প্রার্থীকে অপেক্ষায় রাখার একটি কৌশল হতে পারে। শেষ মুহূর্তে বেগম জিয়ার শারীরিক সুস্থতা সাপেক্ষে চূড়ান্ত মনোনয়নের সময় অন্য কারও নামও যুক্ত হতে পারে।
‘এক নেতা ও এক পরিবার থেকে একজন’ নীতি
এবারই প্রথম বিএনপির রাজনীতিতে শীর্ষ নেতাদের জন্য কঠোরভাবে ‘এক নেতা ও এক পরিবার থেকে একজন’ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থেকে শুরু করে মহাসচিবসহ সকল নেতার জন্য একটি করে আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। বেগম জিয়া তিনটি আসনে মনোনীত হলেও বাকি সব নেতা কেবল একটি আসনের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
- তারেক রহমানের উদাহরণ: স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, “তারেক রহমান নিজেই উদাহরণ তৈরি করলেন, এটা রাজনীতির জন্য ভালো।”
- পারিবারিক সদস্যের বাদ: খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিশ্চিত করেন, “এবার কোনো পরিবার থেকে দুইজন নির্বাচনে অংশ নেবে না। আপনারা দেখেছেন এবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরিবারের কোনো ছেলে-মেয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে না।” তবে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তার সন্তান ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে মনোনীত করা হয়েছে।
মনোনয়ন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়া
মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন সিনিয়র নেতা জানান, প্রার্থী তালিকা প্রস্তুতের প্রক্রিয়ায় তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয়েছে:
১. জরিপ: প্রথমে তারেক রহমান তিনটি জরিপের মাধ্যমে সম্ভাব্যদের নাম তৈরি করেন।
২. আলোচনা: অক্টোবর মাসজুড়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সারা দেশের সম্ভাব্য আগ্রহীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
৩. চূড়ান্তকরণ: সবশেষে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, মনোনয়নে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে: স্বচ্ছ, ক্লিন ইমেজ, ভোট আনতে সক্ষমতা ও মানুষের কাছে যাতায়াত বেশি। দলের একজন নেতা জানান, এই তালিকা প্রস্তুতের সময় মূলত জামায়াতকে আমলে নিয়ে আসন বিন্যাস করা হয়েছে।







