ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইহুদি অধ্যুষিত নগরী নিউইয়র্ক। আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নগরের মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে প্রচার করা হলেও, তিনি এই সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন আদায় করে নিয়েছেন। প্রায় ১০ লাখ ইহুদির আবাসস্থল এই মহানগরে মামদানির প্রতি সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে।
ইহুদিদের সমর্থন: পরিসংখ্যান ও সংগঠন
- প্রাথমিক সমর্থন: ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নির্বাচনের প্রাইমারিতে ৪৪ বছরের নিচের ইহুদিদের ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন জোহরান মামদানি। জরিপ অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে তিনি মোট ৪৩ শতাংশ ইহুদির ভোট পেয়েছিলেন।
- সংগঠিত প্রচার: জোহরানের পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য ‘জিউশ ফর জোহরান’ নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই প্ল্যাটফর্মে জিউশ ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস এবং জিউশ ভয়েস ফর পিস-এর মতো ইহুদি সংগঠনের সমর্থকরাও যুক্ত আছেন।
সমর্থনের মূল কারণ: অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা
জোহরান মামদানির ইহুদি সমর্থকরা ইসরায়েল ইস্যু নয়, বরং নিউইয়র্কের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাকেই সমর্থন জানানোর প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।
- মৌলিক অধিকারের সংগ্রাম: জোহরানের পক্ষে রাস্তায় নেমে প্রচার চালানো জ্যাকব ব্লুমফিল্ড বলেন, সমাজের সবারই বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পুষ্টিকর খাবার ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক অধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু আজ মধ্যবিত্তরাও টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছেন, যা ‘অগ্রহণযোগ্য’।
- মামদানির উপলব্ধি: ব্লুমফিল্ড মনে করেন, “জোহরান একমাত্র প্রার্থী, যিনি এ পরিস্থিতির গভীরতা ও করুণ বাস্তবতা নিয়ে সত্যিই ভাবছেন।”
- তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি: ব্লুমফিল্ডের মতে, তরুণ ইহুদিরা জোহরানকে সমর্থন করছেন, কারণ তাঁরা মনে করেন, ইসরায়েল তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাঁরা বরং নিউইয়র্কে টিকে থাকার সংগ্রাম নিয়েই বেশি চিন্তিত।
অভিনেতা ও কৌতুকশিল্পী ম্যাট কেটাইও (৩৬) বলেন, “আমি জোহরানের ব্যক্তিত্বে বিশ্বাস করি। আমি তাঁর নীতিগুলোকে ভালোবাসি, তাঁর ভাবনাকে ভালোবাসি। তিনি সত্যিই নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন এবং এই শহরকে আরও ভালো জায়গায় পরিণত করতে চান।”
ইসলামবিদ্বেষ ও নিরাপত্তার উদ্বেগ
জোহরানের বিরুদ্ধে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও অন্যদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য এবং ইহুদিবিদ্বেষের মিথ্যা প্রচারে সমর্থকরা উদ্বিগ্ন।
- নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়: ম্যাট কেটাইও বলেন, “যেভাবে ইসলামোফোবিয়া ছড়ানো হচ্ছে এবং ইহুদিবিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাতে একজন ইহুদি হিসেবে আমি কম নিরাপদ বোধ করছি।”
- সংখ্যালঘুদের সংহতি: তিনি বিশ্বাস করেন, মুসলিম ও ইহুদিদের নিরাপত্তা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল এবং জোহরান এমন অনেক কিছু করবেন, যা ইহুদি সমাজসহ পুরো নিউইয়র্কের জন্যই ভালো হবে।
প্রজন্মগত বিভাজন ও ইসরায়েল ইস্যু
সাংবাদিক ক্যালেব এসপিরিতু-ব্লুমফিল্ড মনে করেন, ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে প্রজন্মগত বিভাজনই জোহরানের প্রতি ইহুদি–সমর্থনের অন্যতম কারণ।
- প্রবীণদের দৃষ্টিভঙ্গি: বয়স্ক ইহুদিরা ইসরায়েলকে তাঁদের নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে দেখেন এবং তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো কঠিন।
- জোহরানের অবস্থান: এসপিরিতু-ব্লুমফিল্ড বলেন, তিনি জোহরানকে কখনোই সরাসরি ইসরায়েলবিরোধী বলবেন না। তবে তিনি সান্ত্বনা পান এই ভেবে যে জোহরান একজন মুসলিম, কারণ ইহুদি ও ইসলাম একই সেমিটিক শিকড় থেকে এসেছে এবং তাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।
ম্যানহাটানের ৬৬ বছর বয়সী এক ইহুদি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, জোহরানকে সমর্থন করায় তাঁকে অনেক সমালোচনা শুনতে হচ্ছে, যা ইহুদি সমাজের মধ্যে ভয়াবহ বিভাজন তৈরি করেছে। তবে তিনি মনে করেন, জোহরান একজন সংখ্যালঘু হিসেবে ইহুদি ও মুসলিমদের কীভাবে বাঁচতে হয়, তা বোঝেন এবং আন্তরিকভাবে সম্পর্ক গড়তে চেষ্টা করছেন।







