হারিকেন মেলিসা মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ৫ নম্বর ক্যাটাগরির বিধ্বংসী ঝড় হিসেবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ জ্যামাইকায় আঘাত হেনেছে, যা আটলান্টিক মহাসাগরে রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ঝড়ের ফলে দ্বীপটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, প্রচণ্ড বাতাসে উড়ে গেছে ভবনের ছাদ এবং রাস্তায় পাথর গড়িয়ে পড়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি এই খবর জানিয়েছে। কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির হতে পারে।
জ্যামাইকায় ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়
- ব্যাপক প্লাবন: জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সেন্ট এলিজাবেথ জেলা সম্পূর্ণ পানির নিচে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিষদের উপ-চেয়ারম্যান ডেসমন্ড ম্যাকেনজি।
- অবকাঠামোর দুর্বলতা: জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলেছেন, এই অঞ্চলে এমন কোনো অবকাঠামো নেই যা ক্যাটাগরি ৫ হারিকেন সহ্য করতে পারে। তিনি পুনরুদ্ধারের গতিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
- আটকা পড়া: পশ্চিম জ্যামাইকার ব্ল্যাক রিভার এলাকায় অন্তত তিনটি পরিবার ঘরে আটকা পড়েছে। বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে উদ্ধারকর্মীরা সাহায্য করতে পারেননি।
- বিদ্যুৎ বিভ্রাট: প্রায় ৭৭ শতাংশ জ্যামাইকাবাসী বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে এবং প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
- হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত: চারটি প্রধান হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে একটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ৭৫ জন রোগীকে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
উপ-চেয়ারম্যান ম্যাকেনজি জানান, ১৭৪ বছরের রেকর্ডে এটি দ্বীপে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী হারিকেন।
হারিকেনের গতিপথ ও প্রাণহানি
মঙ্গলবার রাতে, মার্কিন জাতীয় হারিকেন কেন্দ্রের তথ্যমতে, মেলিসার সর্বোচ্চ স্থায়ী বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩০ মাইল এবং এটি উত্তর-পূর্ব দিকে ঘণ্টায় ৯ মাইল গতিতে এগোচ্ছিল। ঝড়টি ক্যাটাগরি ৪ শক্তি বজায় রেখে কিউবার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
- জলোচ্ছ্বাস সতর্কতা: জ্যামাইকার আবহাওয়া দপ্তরের রোহান ব্রাউন সতর্ক করেছেন, মেলিসার ঘূর্ণনপ্রবাহ উত্তর জ্যামাইকার উপকূলে রাতভর বিশাল জলোচ্ছ্বাস আনতে পারে।
- আঞ্চলিক প্রাণহানি: ক্যারিবিয়ান জুড়ে এই ঝড়ে ইতিমধ্যেই সাতজনের মৃত্যু হয়েছে—যার মধ্যে তিনজন জ্যামাইকায়, তিনজন হাইতিতে এবং একজন ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে। আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
- কিউবার দিকে মেলিসা: পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার সকালে হারিকেন মেলিসা কিউবার পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানবে। কিছু এলাকায় ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত এবং উপকূলে বড় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুনরুদ্ধার প্রস্তুতি
জ্যামাইকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক রিচার্ড থম্পসন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কর্মকর্তারা বৈঠক করে ধ্বংসাবশেষ সরানো এবং জরুরি সহায়তা বিতরণ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাতে জ্যামাইকার বন্দরগুলোতে কোনো জট সৃষ্টি না হয়। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই দ্বীপটির বিমানবন্দরগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া যাবে।







