জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক জমা দেওয়া সুপারিশে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্ন মত) পুরোপুরি উপেক্ষা করায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এই ঘটনাকে ‘জনগণের সঙ্গে প্রতারণা’ এবং ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদের লেখা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেন:
- প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন: তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোতে দলগুলো একমত ছিল না, সেখানে তাঁরা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। সেই ভিন্ন মতগুলো সুপারিশে লিপিবদ্ধ করার একটি প্রতিশ্রুতি ছিল কমিশনের, কিন্তু অবাক হয়ে তাঁরা দেখলেন যে সুপারিশে সেই বিষয়গুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।
- প্রতারণার অভিযোগ: “এটা তো ঐক্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন?” প্রশ্ন তুলে তিনি সরাসরি বলেন, “এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা।”
মির্জা ফখরুল বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হওয়ার পরেও তা ঠিকভাবে জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বিভেদ বাড়ছে এবং যারা এই বিভাজন সৃষ্টি করছেন, তাদের বিষয়টি উপলব্ধি করা উচিত।
সব সংকটের মূলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালের সময়টা আসলে ঐক্যের সময়। এখানে ন্যূনতম বিষয়ে একমত হয়ে একটি পথ অনুসরণ করার প্রয়োজন ছিল।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সব সংকটের মূলে যে বিষয়টি আছে, তা হলো—‘সত্যিকার একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’। তিনি বলেন, জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই সব সমস্যাকে সংবিধানের মধ্যে নিয়ে আসবে।
- বিলম্বের সমালোচনা: তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে, তত বেশি সেই শক্তিগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, যারা ফ্যাসিস্ট ও দেশকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়।
- প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান: মির্জা ফখরুল প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আপনি কিন্তু এইবার জনগণের সামনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ওয়াদাবদ্ধ… আজকে যদি এর থেকে কোনো ব্যত্যয় ঘটে, এর থেকে বাইরে যদি যান, তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাকেই বহন করতে হবে।”
‘সংবিধান সংস্কার আদেশ’ জারি নিয়ে জোনায়েদ সাকির প্রশ্ন
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে নোট অব ডিসেন্ট বাদ দেওয়ার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ঐকমত্য ছাড়া কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা কার্যকর হবে না।
জুলাই সনদের আদেশ জারি প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি একটি সাংবিধানিক প্রশ্ন তোলেন:
“অনেকে দাবি তুলছেন যে আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে? সরকার আদেশ দেয়, সেটা রাষ্ট্রপতির নামে যায়, এটা যেকোনো রাষ্ট্রের নিয়ম। যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজে এটা জারি করেন, তার মানে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করছেন এবং কার্যত সংবিধানকে স্থগিত করছেন।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, এবং লেখক ও সাংবাদিক শাহ্নাজ মুন্নী।







