বাংলাদেশে ড্রাইভিং স্কুল খুলছেন জাপানি উদ্যোক্তা মিকি ওয়াতানাবে: এক লাখ কর্মী নিয়োগের পথে অগ্রগতি

জাপানে বিপুলসংখ্যক প্রশিক্ষিত চালকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি বৃহৎ ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন জাপানের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ মিকি ওয়াতানাবে। ওয়াতামি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াতানাবে গত শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই ঘোষণা দেন।

এই বৈঠকটি ছিল গত মে মাসে ড. ইউনূসের জাপান সফরের ধারাবাহিকতা, যেখানে জাপানি উদ্যোক্তারা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন ও জনশক্তির উৎস

মিকি ওয়াতানাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, জাপানে দক্ষ চালকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং বাংলাদেশ সেই চাহিদা পূরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তির উৎস হতে পারে।

  • স্থানের সন্ধান: ওয়াতানাবে বলেন, “আমরা এখন ড্রাইভিং স্কুলটি স্থাপন করতে ১২ হাজার বর্গমিটারের একটি জায়গা খুঁজছি।”
  • প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা: অধ্যাপক ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঢাকার উপকণ্ঠে উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।

ভাষা প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা

ওয়াতানাবে আরও জানান, তিনি ইতিমধ্যে নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে একটি ভাষা প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করেছেন। এই একাডেমি থেকে অন্তত তিন হাজার বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

  • বর্তমানে নির্মাণ ও কৃষি খাতে কাজের জন্য ৫২ জন কর্মী জাপান গেছেন
  • বর্তমানে একাডেমিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং এটিকে ধীরে ধীরে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জাপানি সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও আচরণ শেখানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি শেখানো প্রশিক্ষণের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত। এতে বাংলাদেশিরা জাপানকে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং দেশটিতে যাওয়ার আগে উপযুক্তভাবে প্রস্তুত হতে পারবেন।”

সেবা ও কারিগরি খাতে সম্প্রসারণের আহ্বান

অধ্যাপক ইউনূস ওয়াতামি গ্রুপের প্রধানকে সেবা, নার্সিং, নির্মাণ ও কৃষি খাতেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানান, কারণ এসব খাতে দক্ষ কর্মীরা জাপানে ভালো আয় করতে পারেন। ওয়াতানাবে এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বলেন, “আমরাও এগুলো করতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবগঠিত জাপান সেলের প্রশংসা করেন, যা জাপানি বিনিয়োগকারী ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা সহজ করছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

  • নতুন প্রশিক্ষণকেন্দ্র: জাপানি কোম্পানিগুলোকে যেন মনোহরদী পর্যন্ত যেতে না হয়, সে জন্য ঢাকা বা এর আশপাশে আরেকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
  • আইটি পার্ক পরিদর্শন: প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম জানান, শিগগিরই জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকার আশপাশের সম্ভাব্য আইটি পার্কগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
  • ভাষা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি: অধ্যাপক ইউনূস জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান, কারণ বছরে মাত্র দু’বার পরীক্ষা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

বৈঠকে ওয়াতানাবে এক দশকের বেশি আগে গাজীপুরের নারায়ণকূলে প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয়ের কথা স্মরণ করেন, যা অধ্যাপক ইউনূসের দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল এবং বর্তমানে সেখানে ১,৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top