আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সাবেক ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড অভিযোগ করেছেন যে, স্লো ওভার রেটের জরিমানা থেকে ভারতকে বাঁচাতে একসময় তাঁকে ‘সহানুভূতিশীল’ হতে বলা হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই বিস্ফোরক দাবি করেন।
ভারতকে বাঁচানোর চেষ্টা
ম্যাচ রেফারি হিসেবে ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা ক্রিস ব্রড একটি পুরোনো ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটি ম্যাচে ভারত নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন-চার ওভার পিছিয়ে ছিল, ফলে তাদের জরিমানা হওয়ার কথা ছিল।
ব্রড বলেন:
“ম্যাচ শেষে ভারত তিন-চার ওভার পিছিয়ে ছিল, (স্লো ওভার রেটের কারণে) তাই তাদের জরিমানা হওয়ার কথা ছিল। আমাকে ফোন করে বলা হয়, ‘সহানুভূতিশীল হন, কিছু সময় বের করুন, কারণ এটা ভারত।’ আমি ভাবলাম, ঠিক আছে। তারপর আমরা কোনোভাবে কিছু অতিরিক্ত সময় বের করলাম, যেন ওভার রেট জরিমানার সীমার নিচে নিয়ে আসা যায়।”
তিনি আরও জানান, এর পরের ম্যাচেও একই ঘটনা ঘটে এবং তখন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী দ্রুত ওভার শেষ করার নির্দেশ শুনছিলেন না। তখন তিনি আবার ফোন করে জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয়, “শুধু তাকে (জরিমানা) করো।”
আইসিসি এখন ভারতের নিয়ন্ত্রণে
সাক্ষাৎকারে ক্রিস ব্রড আইসিসি’র অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, বর্তমানে আইসিসি বিভিন্ন উপায়ে ভারতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন:
“এখন সব অর্থ ভারতের কাছে, বিভিন্ন উপায়ে আইসিসিকে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমি খুশি যে এখন আর এর সঙ্গে নেই। কারণ, এটা এখন অনেক বেশি রাজনৈতিক হয়ে গেছে।”
ব্রড আরও বলেন, তাঁর মতো যারা সব সময় ভুল ও সঠিকে বিশ্বাসী, তাদের জন্য ক্রিকেটের এমন ‘সক্রিয় রাজনীতির’ মধ্যে ২০ বছর টিকে থাকা বড় ব্যাপার। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করেন এভাবে: “পৃথিবীর কিছু জায়গায় ঠিক আর ভুলের দূরত্ব অনেকটা গঙ্গা নদীর মতো। অনেক নোংরা পানি ভেতরে বয়ে যায় এবং আপনাকে এটার মুখোমুখি হতে হয়।”
২০ বছরের ক্যারিয়ার ও চুক্তি নবায়ন না হওয়া
ইংল্যান্ডের হয়ে ২৫টি টেস্ট ও ৩৪টি ওয়ানডে খেলা ক্রিস ব্রড ২০০৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে মোট ১২৩টি টেস্ট, ৩৬১টি ওয়ানডে ও ১৩৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।
ব্রড জানান, তিনি আরও কাজ করে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আইসিসি তাঁর চুক্তি নবায়ন করেনি। তিনি তাঁর ২০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক ও শারীরিকভাবে অনেক বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছি। এখন কিছু জায়গায় না যাওয়ায় বরং ভালো লাগছে।”
এছাড়াও, ২০২৩ সালের অ্যাশেজ চলাকালে নিজের ছেলে স্টুয়ার্ট ব্রডের ডেভিড ওয়ার্নারকে ১৭তম বারের মতো আউট করার একটি মিম (Meme) শেয়ার করায় আইসিসি তাঁকে তিরস্কার করেছিল বলেও তিনি জানান।







