পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের রাস্তায় একটি বিলবোর্ডে বিরোধীদলীয় নেতার মন্তব্য দেখে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যথিত ও লজ্জিত। পর্তুগিজ ভাষায় লেখা ছিল—”ISTO NÃO É O Bangladesh” (অর্থাৎ, “এটা বাংলাদেশ নয়”)। পর্তুগালের বিরোধীদলীয় নেতা আন্দ্রে ভেনচুরা তাঁর দেশের সরকারকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্যটি করেছেন।
এই মন্তব্যটি নিছক একটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গ নয়, বরং এর ভেতরে লুকিয়ে আছে দুর্নীতি, অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে একটি জাতির প্রতি বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া নেতিবাচক ধারণার প্রতিফলন।
বিশ্বজুড়ে ‘বাংলাদেশ’ যখন সতর্কবার্তা
একসময় বাঙালিরা জাতি হিসেবে নিজেদের সাহস, ত্যাগ এবং সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বিশ্বকে পরিচয় করাত। কিন্তু এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘বাংলাদেশ’ নামটি দুর্নীতি ও অরাজকতার প্রতীক হয়ে উঠছে।
লেখক তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন:
- অ্যান্টিগুয়ার গণসংগীত: কয়েক বছর আগে টরন্টোর এক ইলেকট্রনিক্স দোকানে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ অ্যান্টিগুয়ার গণসংগীত শিল্পী Brother Emmanuel-এর একটি গান শোনেন। গানের সারমর্ম ছিল—শিল্পী তাঁর দেশবাসীকে সতর্ক করে বলছেন, “হে আমার দেশের মানুষ, দেশকে ভালোবাসো, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ত্যাগ করো, না হলে একদিন তোমাদের দেশও বাংলাদেশ হয়ে যাবে।”
- সতর্কবার্তা: এই ঘটনাটি লেখকের কাছে স্পষ্ট করে দেয়, ‘বাংলাদেশ’ আজ কেবল একটি দেশের নাম নয়, এটি বিশ্বের কাছে এক সতর্কবার্তা—যা হতাশা ও দুর্নীতির চূড়ান্ত উদাহরণ হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে।
প্রবাসীদের গর্ব ও যন্ত্রণার দ্বন্দ্ব
দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা নিজেদের মেধা, পরিশ্রম ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁরা দেখেন, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা নাসায় অবদান রাখছেন, শিক্ষার্থীরা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, এবং অর্থনীতিও বহু উন্নয়নশীল দেশকে পেছনে ফেলছে। প্রবাসীরা ব্যক্তিগতভাবে সৎ ও পরিশ্রমী হলেও, দেশের বদনাম তাঁদের রক্তে আগুন জ্বালায়।
প্রশ্ন জাগে—যে জাতি একসময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল, কেন আজ বিদেশিরা সেই জাতিকে হেয় চোখে দেখছে? কেন আমাদের দেশের এত বদনাম?
প্রত্যাশা: আবার জাগবে বাঙালি
লেখক হতাশ না হয়ে স্বপ্ন দেখেন, একদিন বাঙালি জাতি আবার জেগে উঠবে, ঠিক যেমনভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জেগে উঠেছিল।
তিনি মনে করেন, যেদিন আমরা সৎ নেতৃত্ব বেছে নেব, দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলব এবং স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতি ভাঙব, সেদিন হয়তো আবার পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামটি গর্বের প্রতীক হয়ে উঠবে। সেদিন বিশ্ববাসী আবার বলবে: “সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী আবার অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।”







