রাশিয়ার জব্দ সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ১৪০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ: ইইউ বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

রাশিয়ার জব্দকৃত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ব্যবহার করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনকে ১৪০ বিলিয়ন ইউরো ($১৬৩.২৭ বিলিয়ন) ঋণ সহায়তার বিষয়ে চূড়ান্ত ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নিতে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা বৈঠকে বসেছেন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ বৈঠকে ইইউ ইউক্রেনকে ২০২৬ এবং ২০২৭ সালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছে, যা মস্কোর পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্টা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বৈঠকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং তাঁকে ব্লকের ‘ভবিষ্যৎ সদস্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যদিও এই ঋণ নিয়ে কিছু আইনি ও কৌশলগত জটিলতা রয়ে গেছে:

  • বেলজিয়ামের আপত্তি: রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের বৃহত্তম অংশ (প্রায় $২২৫ বিলিয়ন) বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ার সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরিতে জমা আছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভার এই উদ্যোগের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বেলজিয়ামের দাবি পূরণ না হলে সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
  • জার্মানির উদ্বেগ: জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্জ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে এই বিষয়ে অগ্রগতি হবে।
  • ঝুঁকি ভাগাভাগি: ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি কাজিয়া কাল্লাস বলেছেন, বেলজিয়ামের আইনি নিশ্চয়তা নিশ্চিতে ইইউ একটি প্রক্রিয়া তৈরি করতে প্রস্তুত, কারণ রাশিয়ার সম্পদের ওপরকার ঝুঁকি সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়া উচিত।
  • অস্ত্র ক্রয় নিয়ে বিতর্ক: ইইউ দেশগুলোর মধ্যে বিতর্ক চলছে যে, ইউক্রেন এই ঋণের অর্থ দিয়ে ইউরোপীয় না আমেরিকান অস্ত্র কিনবে।1 জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির মতো দেশগুলো চায়, অর্থ যেন ইউরোপীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের কাছে যায়, যা ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য লাভজনক হবে।

ইউক্রেনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কিয়েভের এই তহবিল চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রয়োজন এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের স্বায়ত্তশাসন থাকা উচিত।

মস্কোর কঠোর প্রতিক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং একে ‘চুরি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করা হলে মস্কো ‘বেদনাদায়ক জবাব’ দেবে।

এদিকে, এই বৈঠকের একদিন আগেই ইউক্রেনের জন্য একটি ইতিবাচক খবর আসে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানি লুকঅয়েল ও রসনেফ্ট-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নতুন এই শক্তি নিষেধাজ্ঞার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সূত্র- আলজাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top