উত্তরায় জুমার খুতবা নিয়ে উত্তেজনা: জামায়াতের হুঁশিয়ারি চিঠি মিম্বারে বসেই ছিঁড়লেন খতিব

জুমার খুতবায় রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং রাজধানীর উত্তরার এক মসজিদের খতিবের মধ্যে তীব্র সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী-কে দেওয়া একটি সতর্কতামূলক চিঠি তিনি মিম্বারে বসেই মুসল্লিদের সামনে ছিঁড়ে ফেলেছেন।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে জামায়াতে ইসলামীর উত্তরা পশ্চিম থানা ইউনিটের দপ্তর সম্পাদক জি. এম. আসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

‘বিভ্রান্তিমূলক’ বক্তব্যের অভিযোগে জামায়াতের হুঁশিয়ারি

গত ১৬ অক্টোবর পাঠানো ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী ১০ অক্টোবর জুমার খুতবায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন।

চিঠিতে জামায়াত উল্লেখ করে, মসজিদের মিম্বার একটি নিরপেক্ষ স্থান। এখানে দাঁড়িয়ে খতিবের উচিত সকল মতের মুসল্লিদের জন্য কুরআন ও হাদীসের আলোকে হেদায়েতমূলক উপদেশ দেওয়া। কিন্তু খতিবের বক্তব্য রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক, যা সমাজে অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করছে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে অবিলম্বে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির দায়ভার খতিব এবং মসজিদ কমিটিকে বহন করতে হবে বলেও সতর্ক করা হয়

জনসমক্ষে চিঠি প্রত্যাখ্যান, মুসুল্লিদের তাকবির ধ্বনি

তবে আজ জুমার নামাজের ঠিক আগে খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী জামায়াতের সেই সতর্কতামূলক চিঠিটি প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, খতিব মিম্বারে বসে মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, “রোজা আর পূজা এক নয়।…আপনারা সংযত ও সংশোধন হোন, তাওবা পড়ুন।”

এরপর তিনি চিঠিটি উপস্থিত মুসল্লিদের সামনে উপস্থাপন করেন এবং মসজিদ কমিটির সদস্যসহ উপস্থিত জনতা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিতে থাকেন। জনসমর্থনের মুখে খতিব নিজ হাতেই চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলেন, যা এই সংঘাতকে আরও প্রকাশ্য রূপ দিল।

প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ ও মিম্বারের নিরপেক্ষতার দাবি

চিঠিতে মসজিদ কমিটির প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছিল, তারা যেন খতিবের পক্ষপাতমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সকল মতের মুসল্লিদের জন্য নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ের পরিবেশ নিশ্চিত করেন।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে চিঠির অনুলিপি ডিয়ারাবাড়ী আর্মি ক্যাম্প, উত্তরা; উপ-পুলিশ কমিশনার, উত্তরা বিভাগ (ডিএমপি); অফিসার ইনচার্জ, উত্তরা পশ্চিম থানাসহ ১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে প্রেরণ করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top