২০২১ সালের আগস্ট মাসে যখন পাকিস্তানি সামরিক ও বেসামরিক নেতারা তালেবানের ক্ষমতা পুনর্দখলকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তখন আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের এমন দ্রুত অবনতি কেউ কল্পনাও করেনি। কিন্তু একসময়ের সেই গোপন বন্ধুত্ব এখন প্রকাশ্য শত্রুতায় পরিণত হয়েছে, যার প্রমাণ সম্প্রতি পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর কাবুলে আঘাত হানার ঘটনা।
মূলত পরস্পরের প্রত্যাশার ভুল সংযোগ এবং সক্ষমতার প্রতি শ্রদ্ধার অভাবই দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের পতন ঘটিয়েছে। উভয় দেশের জন্যই এই সংঘাত গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের বাজি ভুল: টিটিপি-র নজিরবিহীন হামলা
ঐতিহাসিকভাবে আফগান নীতি নির্ধারণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের (ISI) প্রত্যাশা ছিল, তাদের সমর্থিত তালেবান সরকার ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) নেতারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবেন।
কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নজিরবিহীন হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম তিন কোয়ার্টারে ২৪০০-এরও বেশি মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে, যা গত বছরের মোট হতাহতের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
- জাতীয় নিরাপত্তা সংকট: টিটিপি-কে (যার নেতারা এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন) দমনে ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তান এখন একটি ভয়াবহ জাতীয় নিরাপত্তা সংকটের মুখে।
- বহুমাত্রিক সমস্যা: অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থবিরতা, ভারতের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা পাকিস্তানের সংকটকে আরও গভীর করেছে।
টিটিপি তাদের পুরোনো আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা এবং স্থানীয়ভাবে ইসলামিক আইন বাস্তবায়নের দাবিতে অনড়।
আফগানিস্তানের ঝুঁকি: বিচ্ছিন্নতা ও মানবিক ধস
অন্যদিকে, তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকার এই মুহূর্তে চরম আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ও নিষেধাজ্ঞার শিকার। যদিও চীন, ভারত ও ইরানসহ কয়েকটি দেশ তাদের শাসক হিসেবে স্বীকার করেছে, তবুও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কেবল রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
- অভ্যন্তরীণ চাপ: তালেবান নেতারা টিটিপি-কে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে দেখলেও, এই দীর্ঘ সংঘাত আফগানিস্তানের সংকট আরও বাড়াচ্ছে।
- অর্থনৈতিক ধস: দেশটির অর্থনীতি প্রায় ধসে পড়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের মতো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার মুখে।
- মানবিক বিপর্যয়: তীব্র খাদ্য সংকট এবং মানবিক চ্যালেঞ্জে জর্জরিত আফগান জনগণের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করবে।
-আলজাজিরা বিশ্লেষন






