পাকিস্তান আফগানিস্তান উত্তেজনা; ছবি- এএফপি
শনিবার রাতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের একটি বিস্তীর্ণ সীমান্ত অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আফগানিস্তানের পূর্ব দিক থেকে শুরু করে দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত একাধিক প্রদেশে (পাক্তিয়া, হেলমান্দ, পাকতিকা, খোস্ট, নাঙ্গরাহার) দুই দেশের সেনাদের মধ্যে এই লড়াই হয়।
আজ রোববার আফগানিস্তানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তানের ২৩ সেনা নিহত, তালেবান নিহতের দাবি ২০০
এই আন্তঃসীমান্ত সংঘাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কমপক্ষে ২৩ জন সেনা নিহত হওয়ার খবর স্বীকার করেছে। পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন (আইএসপিআর) আজ এই হতাহতের সংখ্যা জানিয়েছে। এর আগে আফগানিস্তান পক্ষ পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছিল।
অন্যদিকে, পাকিস্তান আইএসপিআর তাদের পাল্টা বিবৃতিতে দাবি করেছে, শনিবার রাতের এই লড়াইয়ে অন্তত ২০০ জন তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন।
কাবুল হামলার জের এবং আইএসআইএস নিয়ে উত্তেজনা
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শনিবারের এই সংঘর্ষ ছিল গত ৯ অক্টোবর কাবুলের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পাকিস্তানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানের জবাব। আফগানিস্তানের সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে পাকিস্তানের প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের মূল কারণ হিসেবে টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান)-এর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ধারাবাহিক আক্রমণকে উল্লেখ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবরের ৯ তারিখের হামলাটি কাবুলে লুকিয়ে থাকা এক টিটিপি নেতাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল।
তবে আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাত সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আজ সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উচিত তাদের ভূখণ্ডে লুকিয়ে থাকা আইএসআইএস সদস্যদের বহিষ্কার করা অথবা ইসলামিক আমিরাতের কাছে হস্তান্তর করা, কারণ আইএসআইএস বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য হুমকি।
আফগানিস্তানে চাপা উত্তেজনা: বাড়তি নজরদারি ও সামরিক প্রস্তুতি
সংঘর্ষের জেরে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন চেকপোস্টে সাধারণ গাড়ি থামানোর বাইরেও এখন বারবার কাগজ ও পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হচ্ছে। বাঘরামের পরিত্যক্ত বিমানঘাঁটিতে ছবি তোলার অনুমতিও বাতিল করা হয়েছে, যা “যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি” নির্দেশ করে।
পাঞ্জশির প্রদেশের গভর্নরের সচিব ও মুখপাত্র সইফউদ্দিন লাতুন সকালে এই প্রতিবেদককে আফগানিস্তানে ‘চাপা উত্তেজনা’ থাকার কথা জানান। তিনি নিশ্চিত করেন, গত রাতে সীমান্তজুড়ে লড়াই হয়েছে এবং আফগানরাই মূলত হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, তারা পাকিস্তানি সেনাদের কিছু মৃতদেহ তাদের অর্ধে নিয়ে আসতে পেরেছেন। তবে কাবুল শহরে জীবনযাত্রা মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ এক বিবৃতিতে পাকিস্তানকে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধের দিকে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান যে টিটিপি নেতাকে কাবুলে লক্ষ্য করেছিল, তিনি তখন কাবুলে উপস্থিত ছিলেন না। খলিলজাদ আরও মন্তব্য করেন, ইমরান খান ক্ষমতায় থাকলে এতদিনে টিটিপি সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।







