ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় সন্দ্বীপের ৭ প্রবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যু: একসঙ্গে জন্ম-বেড়ে ওঠা, একসঙ্গেই বিদায় দুই বন্ধুর

চট্টগ্রাম/সন্দ্বীপ: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের ধুকুম সিদ্দা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সাতজন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে পুরো সারিকাইত গ্রাম। গত রোববার (বাংলাদেশ সময় বিকেলে চারটায়) এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে সারিকাইত ইউনিয়নেরই পাঁচজন বাসিন্দা। এই তরতাজা যুবকদের মৃত্যু যেন মানতে পারছেন না শোকে হতবিহ্বল গ্রামবাসী।

অভিন্ন হৃদয়ের দুই বন্ধু: ‘জীবনে এক লগে আছিল, মরণেও এক লগে গেল’

সারিকাইত গ্রামের জীর্ণ ঘরগুলোর সামনে যেন থমকে গেছে সময়। নিহত প্রবাসী মো. বাবলুসাহাবুদ্দিনের বাড়ি পাশাপাশি। শৈশব থেকে শুরু করে ওমানে যাওয়া পর্যন্ত দুই বন্ধু ছিল অভিন্ন হৃদয়ের। গত ২১ সেপ্টেম্বর তারা একই ফ্লাইটে বিদেশ গিয়েছিলেন। বুধবারের দুর্ঘটনাও তাদের আলাদা করতে পারেনি।

বাবলুর মা জোসনে আরা বেগম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, “জীবনে তারা এক লগে আছিল, মরণেও তারা একলগে গেল।” বাবলুর আছে তিন বছরের ছেলে আর দুই বছরের এক মেয়ে। অন্যদিকে, সাহাবুদ্দিন দুর্ঘটনার ঠিক আগের দিন দুপুরে তার চার মাস বয়সী মেয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিলেন। সাহাবুদ্দিনের মা নাজমা বেগম মেঝেতে হাত তুলে বারবার ফরিয়াদ করছিলেন, “আমার ছেলেকে, আমার গলার মালাকে এনে দাও।”

তরুণ পিতাদের শেষ না হওয়া স্বপ্ন

নিহত প্রবাসীরা প্রায় সবাই ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং তাদের বেশির ভাগের চার বছরের নিচে এক বা একাধিক সন্তান রয়েছে।

  • মো. আরজু (২৮): প্রথমবারের মতো বিদেশে গিয়েছিলেন সংসারের অভাব দূর করার স্বপ্ন নিয়ে। তার তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তান আনিসাকে স্মরণ করে বাবা শহীদুল্লাহ বিলাপ করছিলেন, “আনিসা কারে বাপ ডাকবে?”
  • মো. রকি: তার চার মাস বয়সী ছেলে নূর ইয়ামীনের সঙ্গে সাগরে যাওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলেন।
  • আমিন মাঝি (৫০): নিহতদের মধ্যে বয়সে বড় আমিন মাঝি এবার দেশে ফিরে মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৭ বছর প্রবাসে থাকা আমিন মাঝির সেই স্বপ্নও দুর্ঘটনার শিকার মিনিবাসটির সঙ্গে দুমড়েমুচড়ে গেছে। জানা গেছে, সারিকাইতের অন্য নিহত প্রবাসীরা তার অধীনেই ওমান সাগরে মাছ শিকারের কাজ করতেন।

দুর্ঘটনার কারণ ও এলাকার শোক

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওমান সাগরে মাছ শিকার শেষে বাসায় ফেরার পথে প্রবাসীদের বহন করা মিনিবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। কেউ কেউ জানিয়েছেন, দ্রুতগতির একটি লরির ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পাকা মসজিদ গলি থেকে সাগরপারের দিকে একই রাস্তায় নিহত চারজনের বাড়ি। জন্মের পর থেকে সাগরপাড়েই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা এই চার তরুণের মৃত্যুও হলো মধ্যপ্রাচ্যের ধুকুম এলাকার সাগরপারে। তাদের সবার বিদেশে রোজগার করে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন tragically অপূর্ণই রয়ে গেল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top