যুদ্ধ বন্ধের ‘বাস্তব গ্যারান্টি’ ও সেনা প্রত্যাহার চায় হামাস: আলোচনা চললেও গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি বোমা হামলা

গাজায় যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে মিশরীয় শহর শারম এল-শেইখে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যখন পরোক্ষ আলোচনা চলছে, তখনও গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই হামাস একটি চূড়ান্ত চুক্তির জন্য কঠোর শর্ত আরোপ করেছে।

হামাসের মূল শর্ত: সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ও যুদ্ধ বন্ধের গ্যারান্টি

আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধিরা জোর দিয়ে বলছেন যে, কেবল বন্দি বিনিময়ই যথেষ্ট নয়, তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলি আগ্রাসন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। হামাসের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, তারা চান:

১. যুদ্ধের সমাপ্তির বাস্তব গ্যারান্টি: যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল আবার হামলা শুরু করবে না—এই মর্মে ‘বাস্তব গ্যারান্টি’ দিতে হবে। হামাস অতীতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

২. সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার: গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার বাহিনীর ‘সম্পূর্ণ প্রত্যাহার’ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো স্পষ্ট জানিয়েছে যে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে থাকা অস্ত্র সমর্পণের দাবি তারা মানবে না, কারণ ‘ফিলিস্তিনি জনগণের অস্ত্র সমর্পণের অধিকার কারো নেই’

জিম্মি মুক্তি হবে ধাপে ধাপে, সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সংযুক্ত

হামাস আলোচনায় অবশিষ্ট ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দিকে (যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হয়) মুক্তির ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া প্রস্তাব করেছে। হামাসের সূত্র অনুযায়ী, এই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে ধাপে ধাপে, যা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পর্যায়ক্রমিক প্রত্যাহারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে। চূড়ান্ত বন্দি মুক্তি অবশ্যই ইসরায়েলি বাহিনীর চূড়ান্ত প্রত্যাহারের সঙ্গে একই সময়ে সম্পন্ন হতে হবে।

নেসেলেটের লক্ষ্য ‘হামাসের শাসনের অবসান’, হামলা অব্যাহত

আলোচনা চলাকালীনও ইসরায়েলের অবস্থান কঠিনই রয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে—যার মধ্যে রয়েছে জিম্মিদের মুক্তি, ‘হামাসের শাসনের অবসান’ এবং গাজা আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি তৈরি করবে না তা নিশ্চিত করা।

এদিকে, গাজার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের ড্রোন ও যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবারও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা এই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে মোট ৬৬,৬০০ এর বেশি মৃত্যুর সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হলো।

গাজার ভবিষ্যৎ শাসন: হামাস বনাম আন্তর্জাতিক কমিটি

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার শাসন নিয়েও গুরুতর মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে ফিলিস্তিনি ‘টেকনোক্র্যাটরা’ শাসন চালাবেন বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে, হামাস দাবি করেছে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া একটি ‘ফিলিস্তিনি জাতীয় সংস্থা’র তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে শুরু করতে হবে।

আলোচনায় অগ্রগতি নিশ্চিত করতে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা মিশরে যোগ দিয়েছেন, যা চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত দেয়।

সূত্র- আলজাজিরা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top