৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথম: সৌদি আরবের সঙ্গে সাধারণ কর্মী নিয়োগে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর, বাড়বে ২০% জনশক্তি

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আজ সোমবার (৬ অক্টোবর, ২০২৫) রিয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে এটিই প্রথম সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি, যা দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যুগান্তকারী চুক্তি: লক্ষ্য ২০% কর্মী বৃদ্ধি ও সুরক্ষা

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরবের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে এখন বাংলাদেশ থেকে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।

চুক্তিপত্রের মূল অঙ্গীকার: স্বচ্ছতা ও নিয়োগকর্তার দায়বদ্ধতা

অতীতে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মী পাঠানো হলেও, এই আনুষ্ঠানিক চুক্তি কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা সুনির্দিষ্ট করেছে। চুক্তির মূল ফোকাস হলো:

  • স্বচ্ছতা ও প্রশিক্ষণ: দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই এবং নিরাপদ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
  • নিয়োগকর্তার দায়: নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, আকামা নবায়নের দায়িত্ব, এবং দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সময়মতো এক্সিট ভিসা প্রদানের বিষয়গুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত হবে।
  • সুবিধা বৃদ্ধি: বাংলাদেশি কর্মীরা দক্ষতা অনুযায়ী ভালো বেতন, উন্নত কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা পাবেন।

ড. আসিফ নজরুল সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে কর্মী সুরক্ষা, আকামা নবায়নের দায়িত্ব পালন এবং দ্রুত এক্সিট ভিসা প্রদানের বিষয়ে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী প্রেরণের আগে আমরা প্রশিক্ষণ ও স্কিল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করব। এর মাধ্যমে সৌদি আরব আরও গুণগত শ্রমশক্তি পাবে।”

মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন অধ্যায়

জবাবে সৌদি মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী এই চুক্তিকে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি কর্মী কল্যাণ ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মন্ত্রণালয়কে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।

এছাড়াও, বৈঠকে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, কর্মী নিয়োগে ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু, নারী কর্মীদের সুরক্ষা এবং অবৈধ দালাল চক্র দমনে যৌথ মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলার বিষয়েও আলোচনা হয়। কর্মীদের নিয়োগ ও কর্মচুক্তির তথ্য সংরক্ষিত রাখতে একটি যৌথ অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে।

সূত্র- বাসস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top