বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন: ভারতে শাড়ি ব্যবসায় বড় ধাক্কা, রপ্তানি সংকটে বুননকারীরা

সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের জেরে ভারতের ঐতিহ্যবাহী শাড়ি ব্যবসা গুরুতর ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ ভারতীয় শাড়ির অন্যতম বৃহৎ বাজার হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য প্রবাহে সৃষ্ট জটিলতা এবং আমদানিতে ভাটা পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের বস্ত্র শিল্প, বিশেষ করে শাড়ি উৎপাদন কেন্দ্রগুলো লোকসানের মুখে পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

ভারতের শাড়ি ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে কলকাতা, মুর্শিদাবাদ এবং শান্তিপুরের তাঁতশিল্পীরা বাংলাদেশের বাজারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

ক্ষতির মূল কারণগুলি:

১. আমদানি হ্রাস: বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় শাড়ির চাহিদা কমে যাওয়া বা স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের ‘সংযম’-এর কারণে রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

২. পেমেন্ট জটিলতা: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক বাংলাদেশি আমদানিকারক শাড়ির মূল্য পরিশোধে দেরি করছেন বা নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না, যার ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পুঁজি আটকে যাচ্ছে।

৩. সীমান্তের জটিলতা: রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে সীমান্ত এলাকায় পণ্য পরিবহনে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে এবং লজিস্টিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক বাণিজ্যের গতি কমে গেছে।

ভারতীয় ব্যবসায়ী মহল মনে করছে, গত আগস্ট মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ওপর। এর ফলে, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক এবং ছোট ব্যবসায়ীর রুজি-রোজগার ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

শাড়ি বাণিজ্যে বাংলাদেশের গুরুত্ব

ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া বিভিন্ন ধরনের শাড়ির একটি বিশাল অংশ বাংলাদেশে যায়, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবেই এই শাড়িগুলোর বড় কদর রয়েছে। ঈদ, পূজা এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এখানকার জামদানি, বেনারসি, কাতান, এবং বালুচরী শাড়ির বিপুল চাহিদা থাকে। বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র শাড়ি নয়, সামগ্রিকভাবে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও পোশাক শিল্পেও এই সম্পর্কের প্রভাব পড়তে পারে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, শিগগিরই দুই দেশের সরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে বাণিজ্য প্রবাহকে মসৃণ করার উদ্যোগ নেবে।

সূত্র- আলজাজিরা প্রতিবেদন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top