ভাষা শিখে সরকারীভাবে জাপান যাওয়ার সুযোগ: প্রশিক্ষণ পাবে ১ লাখ কর্মী

জাপানের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারকে কাজে লাগাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ‘জাপান সেল’ বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জানানো হয়েছে।

১ কোটি ১০ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি: নতুন চুক্তিতে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের জোর

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল শ্রমবাজার। ‘জাপান টাইমস’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুপ্রেরণায় এই সুযোগ কাজে লাগাতে ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কো-অপারেটিভ ফেডারেশন (এনবিসিসি), জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড (জেবিবিআরএ) এবং কাইকোম ড্রিম স্ট্রিট বিডি কোম্পানি লিমিটেডের (কেডিএস) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তির আওতায় প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। জাপানের সহায়তায় এক লাখ কর্মী প্রশিক্ষণের একটি প্রকল্পও প্রণয়ন করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “জনশক্তি রপ্তানির মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন। নতুন উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।”

শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ‘জাপান ডেস্ক’ ও প্রচার কৌশল

শ্রমবাজারের কার্যক্রম সুসংহত করতে ‘জাপান ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। এই ডেস্কের মাধ্যমে শ্রমবাজারের চাহিদা যাচাই, কর্মসংস্থানের সুযোগ চিহ্নিতকরণ, কর্মীদের ভাষা প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টেস্ট, তথ্যসংগ্রহ এবং জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করা হবে।

এছাড়াও, জাপান সেলের কার্যক্রম জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। এই প্রচারণায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল পেজে প্রচারিত হবে।

প্রশিক্ষণ, ভাষা ও খাত বিস্তারে একাধিক উদ্যোগ

জাপানে মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগে জোর দিতে বেশ কিছু উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে:

  • ভাষা ও প্রশিক্ষণে জোর: জাপানি ভাষা শেখার মোবাইল অ্যাপস প্রচার, অতিরিক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, অনলাইন ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু ও ভাষা শিক্ষকদের সম্মানী বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
  • অর্থনৈতিক সহায়তা: কর্মপ্রার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ চালু করা হয়েছে।
  • সেবা খাত: রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, কেডিএস নার্সিং সেক্টরে দক্ষ কর্মী পাঠাতে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।
  • কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ: বর্তমানে স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) ক্যাটাগরির ছয়টি খাতে (কৃষি, নির্মাণ, কেয়ার ওয়ার্কার ইত্যাদি) কর্মী নিয়োগ চলছে। ভবিষ্যতে এই সুযোগ ১৬টি খাতেই বাড়ানো হবে।
  • নতুন প্রক্রিয়া: ২০২৭ সাল থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) পরিবর্তে এমপ্লয়মেন্ট ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট (ইএসডি) প্রক্রিয়া চালু হবে।

এছাড়াও, আগামী নভেম্বর মাসে টোকিও ও নাগোইয়াতে বাংলাদেশি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান এবং জাপানি নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ‘ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট’ অনুষ্ঠিত হবে, যা কর্মী নিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top