মাত্র এক হাজার টাকার দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে এক অসহায় বৃদ্ধের ঘরের টিন খুলে নিয়ে যাওয়ার মতো এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারটি চরম দুর্দশার মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিচারের আশায় তারা স্থানীয় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের রূপনাথপুর গ্রামে ঘটেছে।
দেনার কারণে ঘরের ছাউনি নেই
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, বৃদ্ধ মতিয়ার রহমানের (৬৪) নাতি কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী সুরুজ মিয়ার কাছ থেকে মোবাইল মেরামতের জন্য এক হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে সেই টাকা ফেরত দিতে না পারায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর সুরুজ দলবল নিয়ে মতিয়ারের বাড়িতে আসে এবং তার বসতঘরের ১০-১২টি টিন খুলে নিয়ে যায়। এর ফলে বর্ষার এই সময়ে মতিয়ার ও তার স্ত্রী জমিলা বেগম চরম বিপাকে পড়েছেন।
মতিয়ারের স্ত্রী জমিলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই এই ঘরের টিন সুরুজ জোর করে খুলে নিয়েছে। অনেক অনুরোধ করেও তাকে থামাতে পারিনি। এখন বৃষ্টির দিনে আমরা খোলা আকাশের নিচে অসহায় অবস্থায় আছি।’
তদন্ত শুরু, তবে সমাধান অধরা
এ ঘটনায় দুই দিন আগে ধাপেরহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই ইয়াকুব ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি অভিযুক্ত সুরুজকে টিন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন এবং আইনিব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে, স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন জানান, তিনি নিজেও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সুরুজ তার কোনো কথা শোনেননি।
ধাপেরহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের এএসআই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। অভিযুক্তকে টিন ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যদি সে ফেরত না দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুর রশিদ মণ্ডলের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে, ইউপি সদস্য আমিনুর রশিদ মণ্ডল নিজে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।
এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও কঠোর ব্যবস্থার দাবি
মাত্র এক হাজার টাকার জন্য এমন অমানবিক ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে। তারা জানিয়েছেন, সুরুজ আগে থেকেই বখাটে এবং মাদক সেবনসহ নানা অপকর্মে জড়িত। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারে না। এলাকাবাসী এই নৃশংস ঘটনার জন্য অভিযুক্ত সুরুজের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনিব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র- বাংলাট্রিবিউন