মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে সাতটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, ‘গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পরেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে এবং সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও সেখানেই আছে।’ তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। তহবিলের ঘাটতির কারণে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন শুরু করাই এখন একমাত্র বিকল্প। এই প্রক্রিয়া চলমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষার চেয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল হবে। রোহিঙ্গারাও ধারাবাহিকভাবে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছে।’
ড. ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা তার প্রস্তাবে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে নিম্নলিখিত সাতটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন:
১. রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
২. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা। একইসঙ্গে, যারা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন এবং যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমে টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা।
৩. রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করা এবং স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৪. রাখাইন সমাজ ও শাসনে রোহিঙ্গাদের টেকসই পুনর্বাসনের জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপে সহায়তা করা।
৫. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার সম্পূর্ণ তহবিলের জন্য দাতা দেশগুলোর সহায়তা একত্রিত করা।
৬. জবাবদিহি এবং পুনরুদ্ধারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
৭. মাদক সংশ্লিষ্ট অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
ড. ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারবে না বিশ্ব। এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’ উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা বিষয়ক এক আঞ্চলিক সম্মেলনেও তিনি একই ধরনের সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন।