মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রাম ও মসজিদ ধ্বংস করেছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়নের পর দেশটির সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রাম, মসজিদ ও কবরস্থান ধ্বংস করে সেখানে নিরাপত্তাচৌকি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিচালিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকটের পেছনের প্রেক্ষাপট

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে পুলিশের অন্তত ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে সশস্ত্র হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এক দমন অভিযান শুরু করে। এতে ব্যাপক সহিংসতা হলে উপকূলীয় এই রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। তখন থেকে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের জনাকীর্ণ শরণার্থীশিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই দমন অভিযান ‘জাতিগত নিধনের আদর্শ উদাহরণ’।

ধ্বংসের সুপরিকল্পিত চিত্র ও ব্যবহৃত প্রমাণ

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ দ্বারা গঠিত ‘ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার’ (আইআইএমএম)-এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের গ্রামের পাশাপাশি তাদের মসজিদ, কবরস্থান এবং কৃষিজমিও ধ্বংস করেছে। প্রতিবেদনটি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য, স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিও ফুটেজ এবং সরকারি নথির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় চুক্তির অধীনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরাও যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক সরবরাহ করে এই ধ্বংসযজ্ঞে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

উদাহরণ হিসেবে, প্রতিবেদনে ইন দিন গ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে পুরোনো বসতি ধ্বংস করে নতুন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ভূমি পরিষ্কার করে নতুন সড়ক, স্থায়ী ভবন, সুরক্ষিত কম্পাউন্ড এবং দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসনের অচলাবস্থা

এদিকে, মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ দেশটিতে বর্তমানে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। এতে রাখাইনে রোহিঙ্গারা আবারও সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য এখন নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এই প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হলো, যখন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরের ক্রমবর্ধমান সংকট এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্র- রয়টার্স

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top