নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করছে বিএনপি: অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী প্রচারণা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে, যার মূল লক্ষ্য জনমত গঠন, বিরোধী দলের সমালোচনার জবাব দেওয়া এবং সংস্কারের অঙ্গীকারের মাধ্যমে ভোটারদের আশ্বস্ত করা।

আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজা শেষে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার উদ্দেশ্যেই এই প্রচারাভিযান। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বৈঠক, সমাবেশ এবং আলোচনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

নির্বাচনী প্রস্তুতির রূপরেখা

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে তারা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবে। সরাসরি ভোটে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ১৫ থেকে ২০ জন নারী নেত্রীরও একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ঘোষিত বিএনপির ৩১ দফা এজেন্ডার ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করবে দলটি।

সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

জামায়াতের দাবির সঙ্গে মতবিরোধ

বৈঠকে জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা। বিএনপি নেতারা এসব দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অহেতুক সময়ক্ষেপণের কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, শুধুমাত্র কিছু সংসদীয় আসন নিশ্চিত করার জন্য পিআর পদ্ধতির দাবি জাতীয় স্বার্থবিরোধী। তিনি আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তারা সমর্থন করেন না, বরং এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, জামায়াতের এই ধরনের কর্মসূচি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে, যা দেশে অস্থিরতা ও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।

সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যখন তৃণমূল পর্যায়ে দলটির নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের অভিযোগ উঠছে, তখন এমন প্রচারণার সিদ্ধান্ত নিলো বিএনপি।

তবে, তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর বিএনপি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে আস্থা প্রকাশ করেছে। দলের নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার বিষয়ে তাদের কোনো সন্দেহ নেই। তারা আরও জানান, সরকার ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে এবং কমিশনও প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপির হাইকমান্ড ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় জরিপ চালিয়ে জনপ্রিয়, শিক্ষিত ও শক্তিশালী প্রার্থীদের তালিকা করেছে। স্থায়ী কমিটির সভায় তারেক রহমানকে এই তালিকাভুক্ত যোগ্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top